Samsherganj

ফের ভাঙন, বাড়ি ছাড়ছেন অনেকেই

এই ভাঙন আতঙ্কে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের মহেশতলা গ্রাম সহ গোটা এলাকা জুড়ে  উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা  অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

Advertisement

বিমান হাজরা , জীবন সরকার 

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৯
Share:

শমসেরগঞ্জে মঙ্গলবার আবার ভাঙন শুরু হল। গঙ্গার জলে পড়ল তিনটি বাড়ি। কিছু বাড়ি ঝুলে রয়েছে নদীর উপরে। নিজস্ব চিত্র।

ফের ভাঙন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের মহেশতলা গ্রামে। সোমবার ভোরে তলিয়ে যায় শ্মশান কালীর মন্দির। মঙ্গলবার সকাল হতেই শুরু হয়ে যায় ফের গঙ্গা ভাঙনের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। সেই ভাঙনের গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গেল একটি তিন তলা বাড়ি। এ ছাড়াও আরও ৩টি বাড়ি তলিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সাত ঘণ্টা ধরে অফিসের মূল ফটক আটকে দিয়ে জঙ্গিপুর শহরে ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করল সিপিএমের শতাধিক কর্মী। সিপিএমের দাবি, গত বছর শমসেরগঞ্জ ও ফরাক্কায় ভাঙন রোধে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয় ভাঙন রোধে। এ বছর শমসেরগঞ্জর জন্য বরাদ্দ হয়েচ্ছে ৫৩ কোটি টাকা। কোথায় গেল সে টাকা।

Advertisement

এই ভাঙন আতঙ্কে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের মহেশতলা গ্রাম সহ গোটা এলাকা জুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গ্রামবাসীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রশাসনিক ভাবে কোনও পদক্ষেপই করা হচ্ছে না তাই ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে একটি গ্রাম।

বোগদাদনগর পঞ্চায়েতের প্রধান ভৃগুরাম সরকার বলেন, ‘‘প্রতাপগঞ্জের গঙ্গা ভাঙনে অনেকের বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

Advertisement

সুবিতা সরকার বলেন, ‘‘আমার চোখের সামনে আমার বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গেল, অথচ আমি কিছু করতে পারলাম না। আমার পরিবারের সবাই বিড়ি শ্রমিক। বিড়ি বেঁধে কোনও মতে সংসার খরচ করে পয়সা বাঁচিয়ে থাকার জন্য ঘর করেছিলাম সেই এক পলকে চলে গেল। এ বার আমরা থাকব কোথায় আমার অন্য কোথাও জায়গা নেই যখানে আশ্রয় নিতে পারব। নেতা মন্ত্রী এসেছিল তাঁরা নিজেরা কেউ কিছু করেননি। শুধু তাঁরা বলে গেলেন, ‘গিয়ে সব বলব আমাদের বড় নেতাদের।’ প্রতিদিন মানুষ গৃহহারা হচ্ছে।’’ তিনি একটা প্রশ্ন করেন, ‘‘যে নেতা ও মন্ত্রী এসেছেন তাঁরা একটি করে বাসস্থানের দায়িত্ব নিতে পারেন তো। ভাঙন রোধ করার দায়িত্ব সরকারের, ভোট দিয়ে নেতা মন্ত্রী আমরা তৈরি করি। তা হলে তাঁরা কেন আমাদের দায়িত্ব নিতে পারেন না।’’

বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা সহ সভাপতি মিলন ঘোষ বলেন, ‘‘ফরাক্কা ব্যারাজের দুই দিকে ৬০০ ফুটের যে কোন কাজ করবে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ, তারপর বাকি কাজ করবে রাজ্য। তৃণমুল তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে কেন্দ্রের উপর দোষারোপ করছে। মানুষ সময়ে উত্তর দেবে।’’

ধুলিয়ান টাউন তৃণমুল কংগ্রেস সভাপতি মেহেবুব আলম বলেন, ‘‘গঙ্গা হচ্ছে জাতীয় সম্পত্তি। গঙ্গাকে স্বচ্ছ রাখার দায়িত্ব যখন কেন্দ্রের, তখন ভাঙন রোধ কেন কেন্দ্র করবে না। রাজ্য সরকার তার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকেও ভাঙন রোধের কাজ করছে। আমি সবার কাছে অনুরোধ করব এখন রাজনীতি না করে ক্ষতি গ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান।’’

জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘ভাঙনের বিষয়টা দেখছেন রাজ্য সেচ দফতরের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। রাজ্য সরকারও শমসেরগঞ্জের ভাঙন নিয়ে উদ্বিগ্ন।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, ‘‘শমসেরগঞ্জে ভাঙনে ভিটে হারিয়ে হাহাকার করছে মানুষ। আর কোটি কোটি টাকার গল্প শুনিয়ে ভাঙন রোধে গঙ্গার পাড়ে ফেলা হচ্ছে বালি বোঝাই বস্তা। কেন এভাবে কাজ হবে? প্রশাসনকে ঘোষণা করতে হবে বাস্তবে ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে কী ঘটছে? কেন স্পার বাঁধানো হচ্ছে না পাথর দিয়ে। তা হলে হয়তো এ ভাবে বাড়ি ধসে পড়ত না।’’ সকাল থেকে অবস্থান বিক্ষোভ চলে বিকেল ৪টে পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement