নয়া জমানার ফ্যান টক্কর দিচ্ছে এসির সঙ্গে। — প্রতীকী ছবি।
গরমের দিনে মানুষের অন্যতম সঙ্গী ফ্যান। এত দিন কেবলমাত্র সিলিং, স্ট্যান্ড এবং টেবিল— এই তিন ধাঁচের ফ্যানই মিলত। কিন্তু এই বসন্তে ফ্যানের জগতেও ঘটে গিয়েছে বড়সড় বিপ্লব। চৈত্র সেলে ইনভার্টার, নয়েজ়লেস, রিচার্জেবল, নন ডাস্ট, কম্প্যাক্ট কুলিংয়ের মত নয়া জমানার ফ্যানই বাজার মাত করছে!
ভৌগোলিক কারণেই রাজ্যের অন্যান্য জায়গার তুলনায় নদিয়ার কৃষ্ণনগরে গরম পড়ে বেশি। কারণ কর্কটক্রান্তি রেখা গিয়েছে এই শহরের বুক চিরে। চাঁদিফাটা গরমে কৃষ্ণনগরের একাংশ কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নয়, ঝুঁকছেন সেই আদি ও অকৃত্রিম ফ্যানের দিকেই। কারণ, করোনা পর্বের অভিজ্ঞতা। রাতারাতি সেই জায়গার দখল নিয়েছে হরেক কিসিমের আধুনিক ফ্যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়া জমানার ফ্যানগুলি যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনই অনায়াসে এসির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আবার দামের দিক থেকেও এসির চেয়ে অনেকটা সস্তা। তাই মানুষ লাইন দিয়ে কিনছেন আধুনিক ইলেকট্রিক ফ্যান।
কৃষ্ণনগর সদরের মোড় থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে একাধিক ইলেকট্রনিক বিপণিতে দেদারে বিকোচ্ছে এ ধরনের আধুনিক পাখা। চাহিদা এমন যে, তা সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানদাররা। চিরাচরিত ফ্যানের বাইরে বাজার ছেয়ে গিয়েছে রিচার্জেবল ফ্যানে। বিদ্যুৎ ছাড়াও টানা ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা ঠান্ডা হাওয়া দিয়ে যাবে এই পাখা। বাজেট আর একটু বৃদ্ধি করলেই পাওয়া যাবে ‘কম্প্যাক্ট কুলিং ফিচার্স’ সম্বলিত পাখা। এই পাখায় পাওয়া যাবে সাধারণ পাখার তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা হাওয়া। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের সময় গরম থেকে বাঁচতে ইনভার্টার ফ্যান, অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ ঘরের জন্য নন ডাস্ট পাখা, এ বারে বিকোচ্ছে দেদার। যে ব্যবসায়ীরা গরমের কথা ভেবে আগে থেকেই এসি মজুত করে রেখেছেন, তাঁদের মুখ ভার। উল্টো দিকে হাসি খেলছে ক্রেতাদের মুখে। গৃহবধূ তানিয়া ইসলাম বলছেন, ‘‘করোনার জন্য দু’বছর এসি চালাতে পারিনি। এসির হাওয়া যে কতটা খারাপ সেটা করোনার সময় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তাই বিভিন্ন জায়গা খুঁজে এই পাখাগুলি কিনছি।’’ যদিও বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। কৃষ্ণনগর ঘূর্ণি এলাকার এক ক্রেতা আশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ধরনের ট্রেন্ডি ফ্যান সব দোকানে নেই। যাঁদের কাছে আছে তাঁরা অনেক বেশি দাম চাইছেন।’’ কৃষ্ণনগরের ফ্যান বিক্রেতা সুভাষ সাহা বলেন, ‘‘অর্ডার দিয়েও মাল পাচ্ছি না। যে দামে অর্ডার দিচ্ছি, ঘরে পৌঁছে দেখছি বেশি দামে বিল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু বললে বলছে, ফেরত দিন। কিন্তু ক্রেতারা সে কথা শুনবেন কেন!’’ এই সমস্যা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই মিটে যাবে বলে মনে করছেন ফ্যান ব্যবসায়ীরা।
নাগরিকদের বদলে যাওয়া অভ্যাসে সম্মতি দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কৃষ্ণনগর শহরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এসির বদলে ফ্যান চালানোর অভ্যাস অনেক স্বাস্থ্যকর। করোনা পরবর্তী সময়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতার যে পরিবর্তন এসেছে তাতে এসির ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভাল।’’