সদস্য হারাচ্ছে সিপিএম

চেনা মুখ অচেনা হচ্ছে দলে

সাত বছর আগে, রাজ্যে পালাবদলের পরে, দাপুটে এক বাম নেতার আক্ষেপ ছিল— ‘ক্ষমতা তো গেল, এ বার চেনা মুখগুলোও অচেনা হয়ে যাবে!’ বাস্তবিকই তাই প্রতি বছরই চেনা মুখগুলো অচেনা হয়ে যাচ্ছে দলে!

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৬
Share:

সাত বছর আগে, রাজ্যে পালাবদলের পরে, দাপুটে এক বাম নেতার আক্ষেপ ছিল— ‘ক্ষমতা তো গেল, এ বার চেনা মুখগুলোও অচেনা হয়ে যাবে!’ বাস্তবিকই তাই প্রতি বছরই চেনা মুখগুলো অচেনা হয়ে যাচ্ছে দলে!

Advertisement

ভয়টা যে অমূলক ছিল না, বছর দুয়েকের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল। পোড় খাওয়া নেতারা আঁচ করেছিলেন ক্ষমতায় থাকা এবং না-থাকা, দু’য়ের ঢের তফাত। তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলে কিছু দিনের মধ্যেই দল বদলের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল বামফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলগুলিতে। বড় শরিক সিপিএম ক্যাডারদের আঁটোসাঁটো করে রাখতে চেয়েছিল বটে, তবে দলের বহু নেতাদের উশখুশানি দেখেই বোঝা গিয়েছিল বাঁধ ভাঙল বলে। বিধায়ক-সাংসদ থেকে পাড়া কাঁপানো নেতা, তৃণমূলের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছিলেন। যার পরিণতিতে হুহু করে পড়তে শুরু করেছিল দলের সদস্য সংখ্যা। সদ্য শেষ হওয়া নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনের পরেও সেই দলত্যগের হিড়িকে যে বাঁধ পড়েনি টের পাওয়া গেল বেশ। গত তিন বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৪ হাজার সদস্য দল ছেড়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পড়শি নদিয়ায় সংখ্য়াটা তুলনায় অনেক কম, ৫৫০, তবে সে জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘রক্তপাত (দলত্যাগ) চলছেই!’’

সিপিএমের জেলা নেতারা অবশ্য একে শুদ্ধিকরণের প্রথম ধাপ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, দলের যে সব কর্মী প্রায় বসে গিয়েছিলেন, তাঁদের সদস্যপদ আর নবীকরণ করানো হয়নি। কিন্তু নিষ্ক্রিয় কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া না তাঁরা নিজে থেকেই দল বদল করে সরে গিয়েছেন, প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।

Advertisement

সিপিএমের মুর্শিদাবাদের জেলা সম্পাদক পুনরায় নির্বাচিত হলেন মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, “সব সময়ই কিছু লোক কাজ না করে মাতব্বরি করেন, এ বার আর তাঁদের রেহাই দেওয়া হয়নি। যাঁরা সক্রিয় তাঁদেরই রাখা হয়েছে।” দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য বলছেন, “মূলত রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবেই কিছু সদস্য নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। এ ছাড়াও শাসকদলের সন্ত্রাস কাউকে কাউকে বসে যেতে বাধ্য করেছে।’’ তবে, যুক্তি যাই হোক, দলের মধ্যেই প্রশ্নটা উঠে গিয়েছে— ক্ষমতায় থাকার সমযে দলের নিচুতলার দিকে নজরই দেয়নি সিপিএম। বেনো জলের মতো হুহু করে সদস্য করা হয়েছে। নব্য এই সদস্যরা দলকে ক্ষমতাহীন অবস্থায় কখনও দেখেননি। ফলে ক্ষমতা হারাতেই তারা সরে পড়েছে। নদিয়ার এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘এই সুবিধাবাদীদের সংখ্যাই দলে বেশি।’’

মুর্শিদাবাদের এক জেলা নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মনে রাখবেন, নতুন নেতা তৈরির কোনও চেষ্টাই ৩৪ বছরে করেনি সিপিএম। দেখুন না এ বারও সেই বর্ষীয়ান মৃগাঙ্কবাবুকেই জেলা সম্পাদক বেছে নিতে হল!’’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জেলা সম্মেলনের হিসেবে দেখা গিয়েছে, সিপিএমের মুর্শিদাবাদে সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার। এখন তা কমে হয়েছে ১২ হাজার। ১৬-১৮ ডিসেম্বর তেহট্টে সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্মেলন হয়। ২০১৫ সালে সে জেলায় সদস্য ছিল প্রায় ৯ হাজার। এ বারে দেখা গিয়েছে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৫০। এর পর, সে প্রশ্নেরই উত্তর হাতড়াচ্ছে দল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement