—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের (ফেস্ট) নামে আদায় করা কয়েক লক্ষ টাকা হুমকি-চক্রের নেতাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে পড়ুয়াদের ফিরিয়ে দিলেন কল্যাণী জেএনএম কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার কলেজের প্রশাসনিক ভবনে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির মধ্যস্থতায় সাধারণ পড়ুয়াদের হাতে সেই টাকা তুলে দেওয়া হয়। তবে এখনও অনেকটা টাকাই উদ্ধার করা যায়নি।
বিগত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা অভীক দে-র (আপাতত সাসপেন্ড) অনুগামী হুমকি-চক্র জেএনএমে জাঁকিয়ে বসেছিল। সাধারণ পড়ুয়াদের বড় অংশের অভিযোগ, সেই চক্রের পান্ডা শেখ মহম্মদ অখিল, আলিম বিশ্বাস ও বিচিত্রকান্তি বালার পাশাপাশি কিছু প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকও যুক্ত ছিলেন। ছিলেন কিছু ছাত্রীও। সেই চক্র নানা অছিলায় সাধারণ পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা তুলত। দাবি মতো টাকা দিতে না পারলে নির্যাতন করা হত। তবে আর জি কর কাণ্ডের জেরে অভীক দে তদন্তের আওতায় চলে আসায় এই চক্র গুটিয়ে যায়। সাধারণ পড়ুয়ারা ভয় ঝেড়ে ফেলে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির সামনে সব অভিযোগ জানান। সেই দিনই ওই কমিটি ফেস্টর নামে তোলা টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সেই ‘ফেস্ট’, যার জন্য ছাত্রছাত্রীদের তালিকা ধরে লাখ-লাখ টাকা তোলা হয়েছিল, তা অবশ্য শেষমেশ হয়নি। তার আগেই আর জি করে স্নাতকোত্তরের ছাত্রীর ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটে যায়। গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির নির্দেশে দিন কয়েকের মধ্যেই চার-পাঁচ জন ছাত্র এসে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে টাকার হিসাব ও প্রায় ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে যান। যদিও ওই ছাত্রদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল। পরে আরও ৬২ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বাকি টাকা কোথায় গেল তার সুনির্দিষ্ট উত্তর অবশ্য ওই ছাত্রেরা দিতে পারেননি। তবে শিল্পীদের অগ্রিম দিতে গিয়ে কিছু টাকা খরচ হয়েছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
উদ্ধার হওয়া সব টাকা কল্যাণী থানার জিম্মায় রাখা ছিল। কলেজ কতৃপক্ষ পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, পুরো টাকা ফেরত দিতে না পারলেও জমা পড়া টাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী এ দিন প্রায় সাড়ে ছ’শো পড়ুয়ার হাতে তাদের দেওয়া টাকার ৭৫ শতাংশ ফেরত দেওয়া হয়েছে।
ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র সমন্বয় দাসের মতে, “এই ঘটনা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। এটা নজিরবিহীন। অন্য কলেজেও যদি এমনটা হয়ে থাকে তা হলে সেখানেও যেন এই ধরনের উদ্যোগ হয়। আশা করছি, এর পরে আর কেউ জোর করে টাকা আদায় করার সাহস দেখাবে না।”
অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির আহ্বায়ক সৌগত বর্মন বলেন, “সহ-উপাচার্যের অনুমোদন নিয়ে অধ্যক্ষের উদ্যোগে ওই টাকা আমরা পড়ুয়াদেরকে ফেরত দিতে পেরেছি। এতে সকলেই খুশি।”