ঢাউস: বেলপুকুর সিদ্ধেশ্বরীতলার কালী প্রতিমা (বাঁ দিকে)। কৃষ্ণনগরের চ্যালেঞ্জ ক্লাবের প্রতিমা (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহে পুজোর খরচ বাঁচানো, কম সংখ্যক লোক নিয়ে প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসা এবং বিসর্জনে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার জন্য অনেক পুজো উদ্যোক্তাদের এই দুর্গাপুজোয় প্রতিমা ছোট করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কালীপুজোয় প্রতিমার উচ্চতা কমানোর প্রবণতা সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
কৃষ্ণনগর শহরে বিভিন্ন ক্লাব বা বারোয়ারিগুলিতে এক একটি কালী প্রতিমার উচ্চতা কম বেশি ১০ থেকে ১৫ ফুটের হয়। অনেক প্রতিমাই বিসর্জন হয় সাঙে করে বেহারাদের কাঁধে চেপে। সে ক্ষেত্রে এই বড় বড় প্রতিমাগুলো বিসর্জন দিতে এক একটি প্রতিমায় কম বেশি ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো বেহারা লাগে। কালীপুজো নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির বৈঠকে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ২ জন ঢাকি, একজন কাঁসি-সহ সর্বাধিক ১৫ জন যেতে পারবেন বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। সে ক্ষেত্রে এত বড় ঠাকুর তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুজো কমিটিগুলোর অনেকে ঐতিহ্যের দোহাই দিচ্ছেন, কেউ বা বলছেন প্রতিমার উচ্চতা নিয়ে তেমন কোনও নির্দেশিকা প্রশাসনের তরফে না থাকায় আগে থেকে ভাবার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
বেশির ভাগ বড় বড় প্রতিমাগুলি পুজো মণ্ডপেই তৈরি হয় বলে পাল বাড়ি থেকে প্রতিমা মণ্ডপে আনার সমস্যার কথাও মাথায় আসেনি বলে মত কিছু পুজো কমিটির। কৃষ্ণনগরের চ্যালেঞ্জ ক্লাবের প্রতিমার উচ্চতা ১৩ ফুট। প্রতিমা নিয়ে যেতে ১১০ জন বেহারা লাগে। ঠাকুরের মাপ এ বছর একই আছে। এ প্রসঙ্গে ক্লাবের সদস্য দিব্যেন্দু নন্দী বলেন, ‘‘ঠাকুর ছোট হলে ঠাকুরের মুখ মিলবে না, আর গহনা বা সাজ যা প্রতি বছর পরানো হয়, সেগুলোও মাপে মিলবে না।’’ তবে এ বছর প্যান্ডেল, বাজনা ও আলোকসজ্জার খরচ কমানো হয়েছে বলে জানান দিব্যেন্দু। এ বছর তাঁরা ১১০ জনের পরিবর্তে ৩০ জন মতো বেহারার সাহায্যে চাকা লাগানো গাড়িতে ঠাকুর তুলে তা বিসর্জনের ঘাটে নিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিসর্জন ঘাটে ঠাকুর নামানো ও বিসর্জনের কাজটি যেহেতু প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে তাই বিধি মেনে ঠাকুর নিয়ে যেতে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ক্লাবের সদস্যরা।
যে সব পুজো উদ্যোক্তারা বিসর্জনে সাঙে ঠাকুর নিয়ে যেতেন এ বছর তাঁরা বেশির ভাগই চাকা লাগানো হাতে ঠেলা গাড়িতে বা লরিতে করে ঠাকুর নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ার ধারাবাহিক ক্লাবের প্রতিমা কাঁধে করে নিয়ে যেতে ৮০ জন, লিচুতলা পাড়ার অনামিকা ক্লাবের ঠাকুর নিয়ে যেতে ১২০ জন বেহারা লাগত। এ বছর তাদের প্রতিমা চাকা লাগানো ঠেলা গাড়িতে করে বিসর্জন হবে বলে জানালেন ক্লাবের সদস্যরা।
তবে এই পরিস্থিতিতে প্রতিমা ছোটও করেছেন কেউ কেউ। কৃষ্ণনগরের কাছেই সন্ধ্যামাঠ পাড়ার যুব নাট্য সঙ্ঘের প্রতিমার উচ্চতা ছিল ৫১ ফুট। এ বছর তাদের প্রতিমার উচ্চতা হয়েছে ৯ ফুট। ক্লাবের এক সদস্য সঞ্জিত প্রামাণিক বলেন, ‘‘এ বছর মানুষের হাত খালি, চাঁদার অবস্থাও ভাল নয়। প্রশাসনের অনুমতি পাওয়াও কঠিন। তাই প্রতিমা ছোট করার সিদ্ধান্ত।’’