উৎপল। —ফাইল চিত্র
বদলে গিয়েছে অনেকটাই তবে পাল্টে গিয়েছে, এমন বলা যাবে না। ভেঙেছে কিঞ্চিৎ তবে মচকায়নি।
দু’হাঁটুতে মুখ গুঁজে গারদের ছায়ায় চুপ করে বসে থাকা স্বভাবটা বদলে ফেলে এখন অন্যের সঙ্গে মজা-মস্করার হারানো চেহারাটা ফের ফিরেছে তার। তবে থানার লক-আপে এক মনে কাগজ পড়ার অভ্যাসটার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মজার গপ্প পড়ার নেশা। চিনতে পারছেন না তো?
উৎপল বেহেরা, দশমীর সকালে জিয়াগঞ্জে বন্ধুপ্রকাশ পালকে সপরিবারে খুনে মূল অভিযুক্ত।
লালবাগ সংশোধনাগারের কর্মীরা জানাচ্ছেন, বই পড়ার ফাঁকে আপন মনে তার হেসে ওঠা দেখে এক বারও মনে হয় না অমন রক্তাক্ত কাণ্ড ঘটাতে পারে ছেলেটি।
লালবাগ মহকুমা উপ-সংশোধনাগারের প্রথম দিনগুলোয় দিনভর মনমরা হয়ে পড়ে থাকত উৎপল। সে সময়, জেলের আবাসিকদের কাছে তার একটাই আর্তি ছিল, জামিন পেয়ে বাইরে গিয়ে একটা ভাল উকিল যদি কেউ দেখে দিতে পারেন, যিনি উৎপলের হয়ে ‘জাঁদরেল সওয়াল’ করতে পারবেন। এক ওর্য়াড বয় বলছেন, ‘‘হাতে পায়ে ধরত, ‘দাদা, একটা ভাল উকিল দেখে দাও না, না হলে এ ভাবে পচে পচে মরতে হবে!’’
তেমন সাড়া না পেয়ে বার কয়েক আত্মহননের চেষ্টাও করেছে সে। বরাত জোরে রক্ষা পেয়ে জেল হাসপাতালেও থেকেছে কয়েক দিন। তবে মাস দুয়েক ধরে সেই অস্থিরতা আর নেই। এখন সে অনেক ধীরস্থির।
এখন প্রতি দিনই অন্য আবাসিকদের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করে কাটছে দিন। সকালে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া হয়ে গেলে ওয়ার্ডময় কাগজ ঘোরে। বেলায় সবার কাগজ পড়া হয়ে গেলে ফের সেটা নিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে বসে সে।
কাগজের সঙ্গে গল্পের বইও তার প্রিয়। একে-তাকে ধরে জেল লাইব্রেরি থেকে হাসির গল্প এনে দেওয়ার জন্য তদ্বিরও কম করে না। সংশোধনাগারের এক পুলিশ কর্মী বলছেন, ‘‘হাসির চুটকি বইটি বার তিনেক পড়ে শেষ করেছে উৎপল।’’
উৎপল এমনটা কেন করলি?
সপ্তাহ দুয়েক আগে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন সংশোধনাগারের ওই পুলিশ কর্মী। খানিক চুপ করে থেকে উৎপল তাঁকে বলেন— ‘ছোট থেকেই বড় অভাবের মধ্যে মানুষ হয়েছি। ইচ্ছে ছিল ব্যবসা করে টাকা পয়সা জমিয়ে মাটির বাড়ি পাকা করব। বাবা-মাকে অন্য কোথাও কাজ করতে দেব না। বন্ধুপ্রকাশ যখন বিমা করানোর জন্য বাবার কাছে এল, তখন সব শুনে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। জানেন, বিমার ম্যাচিওরিটির টাকার পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ!’’
সে জানিয়েছে, বিমার টাকা পেলে সাহাপুরে একটা কাপড়ের দোকান খুলবে ঠিক করেছিল। নিয়মিত তাই প্রিমিয়ামের টাকা দিত। ভিন রাজ্যে খাটতে গিয়েছিল ওই টাকার জন্যই। কিন্তু ফিরে এসে দেখে টাকার কিছুই প্রায় জমা পড়েনি। সে কথা বলতে উল্টে তাকে শুনতে হয়েছিল ‘ছোটলোক’! উৎপল জানিয়েছে— ‘ওই কথাটাই মাখা ঘুরিয়ে দিয়েছিল, খুন চেপে গিয়েছিল গো!’