তখনও ফল ঘোষণা হয়নি। নিজস্ব চিত্র।
চমকপ্রদ সমাপতন! বৃহস্পতিবার ভোট গণনাকেন্দ্রে প্রথম ঢুকেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। গণনার পরে তিনিই হলেন প্রথম!
শীতের ভোরে কার্যত আলো ফোটার পরেই নীল রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পরে সঙ্গে কয়েক জন এজেন্টকে নিয়ে গণনা কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন বিমলেন্দু সিংহরায়। এর ঠিক মিনিট কুড়ি পরে প্রায় দশ-বারো জন এজেন্টের সঙ্গে ঢোকেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রে চলে আসেন সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বি। দু’টি ঘরে গণনা শুরুর আগে তাঁরা তিন জল কিছু ক্ষণ একটি ঘরে রিটার্নিং অফিসার ও পর্যবেক্ষকের সামনে বসেছিলেন।
আটটায় প্রথমে পোস্টাল ব্যালট ও পরে ইভিএমের ভোট গণনা শুরু হয়। এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে প্রথম রাউন্ডের গণনার শেষে তৃণমূল ৪৬৪৩ ভোটে এগিয়ে যায় বিজেপি-র থেকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যখন বিজেপির থেকে তৃণমূলের ব্যবধান ১৪৯২২ ভোটের তখন জয়প্রকাশ মজুমদার গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সোজা জমাতলায় নিজের অস্থায়ী আবাসে চলে যান।
এর পর সময় যত গড়িয়েছে তত গণনাকেন্দ্রে বিভিন্ন দলের এজেন্টদের মুখের ভাব বদলেছে। এক একটি রাউন্ড শেষ হয়েছে আর তৃণমূলের জয়ের গতি বেড়েছে। দুপুর সাড়ে এগারোটা নাগাদ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত করিমপুর ২ এলাকার ভোট গণনার পরে তৃণমূল যখন প্রায় সাতাশ হাজার ভোটে এগিয়ে যায় তখন বিজেপির এজেন্টদের মুখে প্রায় বাদলা দিনের মেঘের আঁধার। সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বিকেও গণনা কেন্দ্রের ভিতরে এক কোণে কয়েক জন এজেন্টের সঙ্গে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা যায়।
দুপুর তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। তত ক্ষণে তৃণমূল কর্মীদের মুখে চওড়া হাসি। তবে জয়ের গন্ধ পেলেও বিমলেন্দুবাবু বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি। মাঝেমধ্যেই বাইরে এসে চায়ে চুমুক দিয়েছেন। ছয় রাউণ্ডের পর সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বি একাই বসেছিলেন। বেলা দু’টো নাগাদ গোলাম রাব্বি হালকা খাবার মুখে দিলেন। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও চা ছাড়া কোনও কিছু খাননি তৃণমূল প্রার্থী।
দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ভোটের চূড়ান্ত ফল জানা গেল। বিজেপির এজেন্ট, সিপিএমের এজেন্ট ও সিপিএম প্রার্থী কেন্দ্র থেকে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে রাব্বি বললেন, ‘‘জোট হলেও কংগ্রেসের বড় অংশ তৃণমূলে ভোট দিয়েছে। এনআরসির ভয়ে বেশিরভাগ মানুষ তৃণমূলকে ভরসা করেছেন। এই ফল নিয়ে দলীয় ভাবে আরও বিশ্লেষণ করতে হবে’’
বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “করিমপুরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রচুর মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। এখানে এনআরসির প্রভাব পড়েছে বলে আমি মনে করি না। প্রভাব পড়লে আগের থেকে বিজেপির ভোট সাড়ে তিন-চার শতাংশ বাড়ত না। কংগ্রেসের ভোট প্রায় পুরোটাই তৃণমূলে চলে গিয়েছে। সেটাই ভোটের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।’’
জয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে বিমলেন্দুবাবু সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন। বলেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমার মনে হয়, এই ভোটে এনআরসি ফ্যাক্টরও কাজ করেছে।’’