বৃদ্ধাশ্রমে প্রথম বার দেখার পরেই ৬৫ বছর বয়সি অপর্ণাকে ভাল লেগে গিয়েছিল সত্তরোর্ধ্ব সুব্রতের। সেই প্রেম পরে পরিণতি পায় বিয়ের পিঁড়িতে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন রানাঘাটের পূর্ণনগর জগদীশ মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক সুব্রত সেনগুপ্ত ও অপর্ণা সেনগুপ্ত। নেটমাধ্যমে বিপুল হয়েছিল ওই খবর।
রানাঘাটের সেই নববিবাহিত বৃদ্ধ দম্পতি এ বার মাতলেন প্রথম জামাইষষ্ঠী উদ্যাপনে। সৌজন্যে অন্নপূর্ণা সরাইঘর-এর কর্ণধার পাপিয়া কর।
রবিবার একেবারে নবদম্পতি সেজেই জামাইষষ্ঠী উদ্যাপন করতে দেখা গেল সুব্রত আর অপর্ণাকে। সুব্রতের পরনে ছিল ধোপদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি। আর অপর্ণা পরে এসেছিলেন লাল জামদানি শাড়ি।
ধান, দুব্বো, তালপাতার পাখা দিয়ে সব রীতি-রেওয়াজ মেনেই সুব্রতকে বরণ করলেন এলাকায় সমাজসেবী বলে পরিচিত পাপিয়া।
শুধু সাজসজ্জায় নয়, জামাইষষ্ঠীর মেনুতেও নজরকাড়া পদের আয়োজন করা হয়েছিল। ছিল মুড়ির ঘন্ট থেকে শুরু করে কাতলা মাছের কালিয়া, আমের চাটনি, লাল দই। সব মিলিয়ে কব্জি ডুবিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন।
কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া শেষে রসগোল্লা মুখে নিয়ে নতুন জামাই বললেন, ‘‘জীবন সায়াহ্নে বিয়ের চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?’’
নদিয়ার চাকদহ লালপুরের বাসিন্দা সুব্রত। রাজ্য পরিবহণ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। পরিবারে মা, দুই ভাই ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানরা আছেন। কিন্তু যৌবনে তাঁর আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। পারিবারিক সমস্যার কারণে ২০১৯ সালের শুরুতে রানাঘাটের ওই বৃদ্ধাশ্রমে শেষ জীবন কাটাতে এসেছিলেন সুব্রত। সেখানেই অপর্ণার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তাঁর।
অপর্ণা অবশ্য সুব্রত আসার আগে থেকেই ওই বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন। প্রথম জীবনে এক অধ্যাপকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। অপর্ণাও অবিবাহিতা ছিলেন। জীবন সায়াহ্নে ওই অধ্যাপকের পরিবারে আর আশ্রয় না পেয়ে তাঁর ঠিকানা হয় রানাঘাটের ওই বৃদ্ধাশ্রম।
প্রেম যে বয়স মানে না তা প্রমাণ করে দিয়েছেন সুব্রত আর অপর্ণা। প্রথম দেখার পরেই প্রেম নিবেদন করেছিলেন সুব্রত। কিন্তু পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন অপর্ণা। মন ভেঙেছিল সুব্রতের। অভিমানে বৃদ্ধাশ্রমও ছেড়েছিলেন তিনি। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। তবু শেষমেশ সুব্রতের প্রেমেই ধরা দিলেন অপর্ণা। আর তার পরেই বিয়ে।
সকলের আশীর্বাদে বিয়ে হলেও সুব্রতের জামাইষষ্ঠী পালন করবে কে? তখনই এগিয়ে এলেন পাপিয়া। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় জামাই আর কোথায় পেতাম? ওঁদের হাসিমুখ দেখে সত্যিই ভাল লাগছে।’’
কোভিডের সময় রানাঘাট স্টেশনের গৃহহীন মানুষের মুখে ভাত তুলে দিতেন পাপিয়া। পরে অতিমারির দাপট কমলেও এই কাজ বন্ধ করেননি তিনি। এর পরেই রানাঘাট স্টেশনের পাশেই ‘অন্নপূর্ণা সরাইঘর’ খোলেন পাপিয়া। ওই হোটেল থেকেই প্রত্যেক দিন ১০০ জন গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খেতে দেন তিনি।
পাপিয়া বলেন, ‘‘নদিয়ার সমস্ত অসহায়, একাকী মানুষই আমার সন্তান। এ বছর বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অসহায় মানুষের দীর্ঘায়ু কামনা করে ষষ্ঠী পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’