বৌবাজার বারোয়ারীর মণ্ডপ। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে । ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর খ্যাতি আর রাজ্যে আটকে নেই। দেশে তো বটেই, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে পুজোর সুনাম। বাংলা যখন দুর্গাপুজোয় মাতে, কৃষ্ণনাগরিকেরা মুখিয়ে থাকেন জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য। আবার যত দিন যাচ্ছে, বারোয়ারিগুলিও নিজেদের ততই সমৃদ্ধ করছে। সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক ভাবনার। কৃষ্ণনগরের এমন কয়েকটি বারোয়ারি ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।
গোলাপট্টি বারোয়ারি
মানুষ তার জীবনকে নির্দিষ্ট চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। যেন সে একটা খাঁচার ভেতরে নিজেকে বন্দি করতে চায়। অদৃশ্য সীমানা গড়ে তার মধ্যে আটকে থাকতে চায়। সেই সীমানা ভাঙার গানই এ বার গাইতে চায় কৃষ্ণনগরের গোলাপট্টি বারোয়ারি। তাদের এ বারের থিম ‘সীমানা’। যেখানে মানুষের নিজের তৈরি গণ্ডিকে ভেঙে বেরিয়ে আসার কথা বলা হবে। প্রায় ৯০ বছরের পুরনো এই বারোয়ারি কৃষ্ণনগরে প্রধান জগদ্ধাত্রী পুজোর একটি। তাদের বিষয় ভাবনা ও সৃজনশীলতা দর্শকদের বরাবর মুগ্ধ করে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা। গোলাপট্টি বারোয়ারির স্থায়ী মণ্ডপ রয়েছে। সেই মণ্ডপেই প্রতি বছর দৃষ্টিনন্দন মণ্ডপসজ্জা করে থাকেন শিল্পীরা। সেই সঙ্গে তাদের পুতুল মূর্তি অন্যতম আকর্ষণ। এই প্রতিমাকে অনেকেই ‘তাসের রানি’ নামে ডেকে থাকেন। এ বারের বাজেট প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। বারোয়ারির সম্পাদক সৌনক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রতি বছরই এমন কিছু বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করি যেটা মানুষের চেতনাকে প্রভাবিত করে। আমরা বিষয়ের পাশাপাশি শিল্প নৈপুণ্যের দিকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি।”
বাঘাডাঙা বারোয়ারি
কৃষ্ণনগর শহরে আর একটি জনপ্রিয় পুজো হল বাঘাডাঙা বারোয়ারি। প্রতিমার নাম ‘বাঘা মা’। প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই পুজোয় এ বার মানব সভ্যতা যে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে তা-ই থিমে তুলে ধরা হবে। নাম ‘অশনি সঙ্কেত’। সেখানে পরিবেশের উপর মানুষে যে ভাবে অত্যাচার চালিয়ে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করাচ্ছে, যে ভাবে সে ক্রমে নিজের বিপদ ডেকে আনছে, তা-ই ফুটিয়ে তোলা হবে। এই বারোয়ারির প্রতিমা সিংহের পাশাপাশি বাঘের পিঠেও সওয়ার হন। পাশাপাশি প্রতিমার দুধ-সাদা শোলার সাজ পুজোর প্রধান আকর্ষণ। এ বারের বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বলে বারোয়ারির কর্মকর্তারা জানান। বাঘাডাঙা বারোয়ারির সহ-সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, “ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি আমরা চাই মানুষকে আনন্দ দিতে। সেই সঙ্গে থিমের বিষয় ভাবনাও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ বারও আমরা সেই চেষ্টা করেছি।”
বউবাজার বারোয়ারি
বছরের পর বছর ধরে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মানচিত্রে বউবাজার বারোয়ারি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাদের থিমে বিষয় বৈচিত্র ও সৃজনশীলতা দর্শকদের আনন্দ দিয়ে এসেছে। এ বার তারা তৈরি করছে ‘রাজস্থানের রাজমহল’। যা এ বারের পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে বলে কর্মকর্তাদের দাবি। এই পুজোর প্রতিমা ‘মা মহেশ্বরী’ নামে পরিচিত। সাবেক মূর্তিও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। উদ্যোক্তারা জানান, এই বারোয়ারির বয়স প্রায় ১৬৮ বছর। এ বারের বাজেট প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। বারোয়ারির সম্পাদক অনুপম পাল বলেন, “অনেক দিন ধরেই আমাদের ইচ্ছা ছিল রাজস্থানের উপর কিছু করার। এ বার সেই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের থিম এ বার মানুষের মন জয় করে নেবে।”