আসার পথ আছে, নেই থাকার হোটেল

চৈতন্যের জন্মভিটে এখন গঙ্গাগর্ভে বলে অনেকেরই ধারণা। বিলীন শাস্ত্র ও ন্যায়চর্চার অতীত গরিমা। বরং গঙ্গার পূর্বপাড়ে মাথা তোলা মায়াপুরে উৎসব-পর্যটনের দৌলতে নতুন করে জীবন খুঁজছে এই শহর। কিন্তু পর্যটনের জন্য সত্যি কি সে প্রস্তুত? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। পর্যটনের দৌড়ে ভাগীরথীর পশ্চিম পারকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে পূর্ব পারের মায়াপুর।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৪
Share:

রাস্তার দখল নিয়েছে টোটো। —নিজস্ব চিত্র।

ইতিহাসের বিচারে সহস্রাব্দ প্রাচীন নবদ্বীপের তুলনায় প্রায় কিছুই নয় মায়াপুর। বৈষ্ণব শ্রীচৈতন্য থেকে শাক্ত আগমবাগীশ, বৌদ্ধ-তন্ত্র থেকে নব্যন্যায়— জ্ঞান ও বুদ্ধিচর্চার বহতা ধারা এই শহর। কিন্তু পর্যটনের দৌড়ে ভাগীরথীর পশ্চিম পারকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে পূর্ব পারের মায়াপুর।

Advertisement

তার যথাযথ কারণও আছে। এক তো জৌলুসে মায়াপুরের ধারে-কাছে ঠেকে না জরাজীর্ণ এ শহর। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্য যা কিছু জরুরি, অনেকটাই এখনও তার অধরা।

যোগাযোগ: কলকাতা, বর্ধমান বা বহরমপুর— এই তিন বড় শহর থেকে নবদ্বীরের দূরত্ব বড় জোর ঘণ্টা তিনেকের। রেল আর সড়ক, দুই পথে যাতায়াত। হাওড়া আর শিয়ালদহ যাওয়ার প্যাসেঞ্জার-লোকাল মিলিয়ে দিনে বিশ জোড়া ট্রেন চলে। সঙ্গে তেরো জোড়া দুরপাল্লার ট্রেন। নবদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড থেকে দৈনিক শতাধিক লোকাল ও দূরপাল্লার বাস ছাড়ে। জলপথে মায়াপুর ও কৃষ্ণনগরের সঙ্গে যোগাযোগও যথেষ্ট ভাল।

Advertisement

থাকা-খাওয়া: পর্যটক তো শহরে এলেন, থাকবেন কোথায়? খাবেনই বা কি? নবদ্বীপে থাকার ভরসা মূলত মঠ-মন্দিরের অতিথিআবাস। ভাল হোটেল বলতে যা বোঝায় তা নেই। তারকা হোটেল দূর অস্ত্। উৎসবের সময় এক রাত মাথা গোঁজার জন্য হাহাকার। খাওয়া বলতে মন্দিরের প্রসাদ। ভক্তজনের হয়তো তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নিছক বেড়াতে বা গবেষণার কাজে আসা মানুষজন যান কোথায়? তা ছাড়া উৎসবের সময়ে মঠ-মন্দিরে নিজেদের ভক্ত-শিষ্যদেরই অগ্রাধিকার।

পথঘাট: আর এক বড় সমস্যা ঘিঞ্জি পথঘাট। প্রায় ১১.৬৬ বর্গ কিলোমিটারের নবদ্বীপ পুর এলাকায় রাস্তা আছে কমবেশি ২২২.৮৩ কিলোমিটার। ২১৫ কিলোমিটার মোটর চলাচলের উপযুক্ত। এর মধ্যে দখল হয়ে গিয়েছে বহু রাস্তা, ফুটপাথ। নিকাশি নালা, বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহের কাজের চোটে বহু রাস্তা বেহাল। সমস্যা বাড়িয়েছে কয়েক হাজার টোটো। রুট, ভাড়া, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড কোনও কিছুই মাথমুন্ডু নেই। যখন-তখন যে কোনও রাস্তায় যানজট এ শহরে পর্যটনের বড় বাধা।

পরিচ্ছন্নতা: এ দেশে তীর্থস্থান বেশির ভাগই অপরিষ্কার। নবদ্বীপও ব্যতিক্রম। নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরনো ঘিঞ্জি শহরের ভূগোল রাতারাতি পাল্টানো যাবে না। কিন্তু সংকীর্ণ পথঘাট নিয়মিত সংস্কার করা, ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথ যানজটমুক্ত রাখা এবং সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে না পারলে পর্যটন ধাক্কা খাবে। পর্যাপ্ত জন শৌচালয়ও চাই।”

একটা ব্যাপারে কিন্তু নবদ্বীপ অন্য নানা শহরের চেয়ে এগিয়ে। তা হল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ভোর থেকে মাঝরাত— এই শহর বহিরাগতদের কাছে নিরাপদ। অন্তত গত বিশ বছরের পুলিশ রেকর্ড তা-ই বলছে।

কিন্তু বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান যদি না করা যায়, নানা জাতি ভাষা ধর্মের মানুষের থাকা-খাওয়া, সচ্ছন্দে ঘোরাফেরার ব্যবস্থা যদি না করা যায়, ভক্তজনের বাইরে বাকি পর্যটকদের টানবে কী করে নবদ্বীপ?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement