ডাকাতির তদন্তে রানাঘাটে এসেছেন রায়গঞ্জের পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদেব দাস
গয়নার দোকানে ডাকাতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে রানাঘাট জেলা পুলিশ। কিন্তু তিন ডাকাত তিন দিন পরেও অধরা। স্থানীয় সহযোগিতাতেই তারা গা-ঢাকা দিয়েছে, না কি পুলিশের নজর এড়িয়ে তারা জেলা ছেড়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
গত মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ তিনটি মোটরবাইকে এসে আট দুষ্কৃতী ক্রেতা সেজে একটি নামি সংস্থার গয়নার দোকানে হানা দেয়। রানাঘাট থানায় সেই খবর পৌঁছতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ। তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ডাকাতেরা পালানোর চেষ্টা করে। যদিও ওই দোকান থেকে প্রায় চারশো মিটার দূরে মিশন রোড থেকে গুলিবিদ্ধ দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে পুলিশ। বাকি ছয় দুষ্কৃতী রানাঘাট-শিয়ালদহ শাখার রেললাইন পার করে সাধুর বাগান, শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে যায়। তাদের পিছু ধাওয়া করে পৃথক দুই জায়গা থেকে পরে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাকি তিন জনের কোনও খোঁজ মেলেনি।
বস্তুত, দুষ্কৃতীদের পালানো বা গা-ঢাকা দেওয়ার একাধিক পন্থা রয়েছে। এক) কুপার্স, রায়নগর, গাংনাপুর হয়ে চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়কে তারা পৌঁছে যেতে পারে। দুই) রানাঘাট শহরে রেলের পূর্ব পারে থাকা সাধুর বাগান থেকে কুপার্সের ভিতর দিয়ে রানাঘাট-পানিখালি রাজ্য সড়ক ধরে চম্পট দিতে পারে তারা। তিন) ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রানাঘাট স্টেশন ট্রেন ধরেও পালাতে পারে দুষ্কৃতীরা। চার) স্থানীয় কারও সহযোগিতায় এলাকাতেই কোনও নিরাপদে ডেরায় তারা লুকিয়ে থাকতে পারে।
পুলিশের দাবি, ডাকাতির পরে কুপার্স থেকে রায়নগর, নোকারি বেগোপাড়া হয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যাওয়ার রাস্তায় চিরুনি তল্লাশি চলেছে। ফলে, দুষ্কৃতীদের সড়কপথে এলাকাছাড়া হওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে রানাঘাট স্টেশন হয়ে তারা পালিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাদের এলাকাতেই লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনাও তাঁরা উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
রানাঘাট থানা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত তিন দুষ্কৃতীর খোঁজে রানাঘাট স্টেশনে ট্রেনে উঠে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু স্টেশনে ক্লোজ় সার্কিট ক্যামেরা নেই। ফলে তারা যদি ট্রেনে উঠে চম্পট দেয়, সে ক্ষেত্রে তাদের ধরাটা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে। শিয়ালদহ ডিভিশনে রানাঘাট দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন। বনগাঁ, গেদে, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, লালগোলা শাখায় ট্রেন চলাচল করে রানাঘাট হয়ে। স্টেশনে প্রবেশের নির্দিষ্ট দু’টি পথ ছাড়াও ভূগর্ভস্থ পথ, ফুট ওভারব্রিজ এবং উত্তর ও দক্ষিণে উন্মুক্ত পথ রয়েছে। কয়েক হাজার যাত্রীর ভিড়ে কে, কখন, কোন পথে স্টেশনে যাতায়াত করছে তার নজরদারি সিসি ক্যামেরা ছাড়া সম্ভব নয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, গুলিতে আহত মণিকান্ত যাদব (১৯) ও ছোটু পাসোয়ানের (২০) অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার রাত ১০টা নাগাদ তাদের রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মণিকান্ত শল্য বিভাগের চিকিৎসকের অধীনে এবং ছোটু অস্থি বিভাগের চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি রয়েছে। মণিকান্তের উরুতে গুলি লেগেছে। তবে রানাঘাট থেকে তাকে স্থানান্তরিত করার সময়ে উল্লেখ করা হয়নি, গুলি ভিতরে ঢুকে আছে কি না। শুধু লেখা হয়েছে, আলট্রাসোনোগ্রাফিতে কিছু আসেনি। এক্স-রে করেও কোনও হাড় ভাঙার বিষয় পাওয়া যায়নি। এক্স-রে প্লেটও রোগীর সঙ্গে দেওয়া হয়নি। জেএনএমে আবার তার এক্স-রে করা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তাই এ দিন সিটি স্ক্যান করতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে, ছোটু কুমারের হাঁটুর নীচে গুলি লেগে হাড় ভেঙে গিয়েছে। প্লাস্টার করা রয়েছে। দু'জনকেই মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের একটি আলাদা ঘরে পুলিশ পাহারায় রেখে চিকিৎসা চলছে। তাদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।
আগের দু’দিনের মতো এ দিনও বাকি তিন ধৃতকে দফায় দফায় জেরা করেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তদন্তকারীরা। গত এপ্রিলে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে একটি গয়নার দোকানে ডাকাতি হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও বিহার যোগের প্রমাণ মিলেছিল, কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয়নি। রায়গঞ্জ পুলিশের চার সদস্যের একটি দল এ দিন রানাঘাটে এসে ধৃতদের জেরা করেছেন। তিন ধৃতের অন্যতম কুন্দন যাদবকে জেরার পরে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ অফিসারেরা দাবি করেছেন, গত ১ এপ্রিল শক্তিগড়ে কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনে সে জড়িত ছিল। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, "অধরা দুষ্কৃতীদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।"