তীব্র দহনে পুড়ে যেতে বসেছে পাট-চারা। মাঝ বৈশাখেও বিকেলে বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে টানা তাপপ্রবাহে পাট চাষিরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার পাট চাষ নষ্ট হতে বসেছে। বিশেষত বালি মাটির চর এলাকার পাট চাষ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর এমনিতেই চড়া দামে পাট বীজ কিনতে হয়েছিলে চাষিদের। তার উপর প্রকৃতির মার। সব মিলিয়ে চাষিরা এখন মাথায় হাত দিয়ে লোকসানের হিসেব কষতে ব্যস্ত।
ফুটিফাটা জমিতে জল বেশিদিন থাকছে না। দিন দুয়েকের মধ্যে তৃষ্ণার্ত মাটি শুষে নিচ্ছে জল। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়ে কোনওরকমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন চাষিরা। ঘন ঘন সেচ দিয়ে গিয়ে চাষির পকেটে টান পড়ছে। মাটি শুকিয়ে কাঠ। ফলে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে সময় লাগছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। ঘণ্টায় ১০০ টাকা করে গুনতে হচ্ছে চাষিকে। ফলে এক বার সেচ দিতেই প্রায় ছ’শো টাকা খরচ হচ্ছে। খরাতে পাট চারাতে পোকার উপদ্রব বেড়েছে।
কৃষি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই সময়ে ঘন ঘন সেচ না দিলে সেচ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। তাছাড়া চড়া রোদে পাট বাড়বাড়ন্ত কমবে। চাষিদের দাবি, ইতিমধ্যে চরের জমির পাট সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চরের বালি জমিতে সেচের জল সে ভাবে স্থায়ী হতে পারে না। ফলে চরের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েকশো বিঘের পাট চাষ মার খেয়েছে।
কালোবাজারির দরুণ এ বছর অন্তত তিন গুন দামে চাষিদের পাটের বীজ কিনতে হয়েছিল। তার উপর ঘন ঘন সেচ দেওয়ার খরচ তো রয়েইছে। ডোমকলের বঘারপুর রমনা গ্রামের হাসিবুল শেখ বিঘে পাঁচেক জমিতে পাট চাষ করেছিলেন।
তাঁর কথায়, ‘‘একে চড়া দামে বীজ কিনতে হয়েছে। ভেবেছিলাম, ফলন ভাল হলে সব পুষিয়ে যাবে। কিন্তু এখন যা হাল, তাতে খরচ উঠবে বলেই মনে হচ্ছে না। একবার সেচ দিতে বিঘা প্রতি ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে।’’ চাষিদের একাংশ জানাচ্ছেন, ফি বছর দুই-একবার সেচ দেওয়ার পর বৃষ্টি নামে। কিন্তু এ বার বৃষ্টির দেখাই নেই। ফলে পকেটের টাকা খরচ করে সেচ দিতে হচ্ছে। আবার প্রবল গরমে পাটের মানও খারাপ হচ্ছে।
ইসলামটুলির চাষি সাইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘কেবল গাছ নেতিয়ে পড়া বা মরে যাওয়া নয়, রোদ গরমে এক ধরণের পোকার উপদ্রবও হচ্ছে পাটে। ফলে এখন কী করব তা নিয়েই চিন্তিত।’’ রানিনগর ব্লকের উপ-কৃষি অধিকর্তা মিঠুন সাহা বলেন, ‘‘আমরাও উদ্বেগে আছি। অনেক চাষি ফোন করে জানতে চাইছেন, এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিৎ। আমরা চাষিদের সেচ দেওয়ার অনুরোধ করছি।’’
তবে সব থেকে বিপাকে পড়েছে জলঙ্গি ও রানিনগর চর এলাকার চাষিরা। একে বালি মাটি, তার উপর সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। সেখানে হাজার হাজার বিঘা পাট জমিতে পাট চাষ করে এখন দিশেহারা অবস্থা চাষিদের। জলঙ্গির চর পরাশপুরের জাব্দুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘বিঘা আড়াই জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পাট পুড়ে ছাই হওয়ার জোগাড়।’’