কল্লোল খাঁ। নাকাশিপাড়ার বিধায়ক।
বিধানসভা ভোটের আগে সংহত হওয়া দূরে থাক, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষে বরং আরও ছন্নছাড়া অবস্থা নদিয়া জেলা তৃণমূলের।
দলের ব্লক সভাপতি পরিবর্তন নিয়ে প্রথম থেকেই বিদ্রোহী ছিলেন নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ। এ বার জেলার সমস্ত নেতৃত্বের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি চাইলেন তিনি। সেই সঙ্গে নাকাশিপাড়ায় বিক্ষোভে শামিল, সদ্য পদ থেকে অপসারিত অশোক দত্ত ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য জেলা নেতৃত্বের কাছে দাবিও জানালেন বর্ষীয়ান এই নেতা। পরে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে নবগঠিত জেলা কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কল্লোল খাঁ বলেন, “গৌরী ও নন্দের মতো বর্ষীয়ান নেতাদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা উচিত। দলের প্রতি এঁদের অবদানের কথা আমি ভুলতে পারি না। তাই আমি পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।”
রবিবার নদিয়ায় তৃণমূলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটি ঘোষণার পরেই নানা এলাকায় ক্ষোভের তুষে আগুন লেগেছে। বিশেষ করে প্রবীণ নেতাদের ডানা ছাঁটা যাওয়ায়। নাকাশিপাড়া ব্লক সভাপতি পদ থেকে অশোক দত্তকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। তা আটকাতে প্রথম থেকেই সর্বোচ্চ স্তরে সক্রিয় ছিলেন কল্লোল। আটকাতে চেয়েছিলেন জেলার অন্য বর্ষীয়ান নেতারাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরতেই হয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকে টানা ব্লক সভাপতির দায়িত্বে থাকা অশোককে। দলেরই একটি অংশের দাবি, প্রথম থেকে বর্তমান জেলা সভাপতির সঙ্গে বিরোধের কারণেই তাঁকে সরতে হল। তার জেরে সোমবার বেথুয়াডহরিতে দলের ব্লক কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন অশোক অনুগামীরা। মঙ্গলবার শামিয়ানা টাঙিয়ে তাঁরা দিনভর ব্লক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
এই পরিস্থিতিতে কল্লোল খাঁর অবস্থান কী হয় তা জানতে সকলেই আগ্রহী ছিলেন। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এ দিন কৃষ্ণনগরে জেলা পরিষদের সভাকক্ষে দলের নবগঠিত জেলা ও ব্লক কমিটির পদাধিকারীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীতে এসে তিনি শুধু পদ থেকেই অব্যাহতিই চাননি, অশোক দত্তদের সঙ্গে কথা বলার দাবিও রাখেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। পরে তিনি বলেন, “যা হচ্ছে সেটা দলের জন্য একেবারেই ভাল হচ্ছে না। জেলা নেতাদের বলেছি, ওঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার জন্য।”
জেলার অন্য দুই প্রবীণ নেতা রানাঘাটের শঙ্কর সিংহ এবং শান্তিপুরের অজয় দে বিজয়া সম্মিলনীতেই আসেননি। শঙ্কর রবিবারই জানিয়েছিলেন, এই নতুন কমিটি নিয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তাহেরপুর, বীরনগর, কুপার্স ক্যাম্প, গয়েশপুর এলাকার শঙ্কর অনুগামীদের সভাপতিদের পদ থেকে সরানো হয়েছে তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনাই না করে। একই অবস্থা শান্তিপুরেও। শান্তিপুর শহর ও ব্লক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে অজয়-বিরোধী গোষ্ঠীর অরিন্দম ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠদের। শঙ্কর ও অজয়কে উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা হলেও তাঁরা বিষয়টি মানতে পারছেন না বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের দাবি।
তবে উপদেষ্টামণ্ডলীতে ঠাঁই না-পাওয়া দুই প্রাক্তন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ও পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহা বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কোনও ক্ষোভ জানাননি। গৌরীশঙ্কর বরং নতুন কমিটির নেতৃত্বে জেলার ১৭টি আসনেই দল জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
আর এক প্রবীণ নেতা, কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক তথা দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “আবেগের বশে কেউ কিছু বললে তা ধরা উচিত নয়। সবাই দলের সঙ্গেই আছেন।”