প্রতীকী ছবি।
ভিতরে-ভিতরে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এ বার তা পৌঁছে গেল রাজ্য নেতৃত্ব পর্যন্ত। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক ও অসাংবিধানিক কার্যকলাপ’-এর অভিযোগ তুলে রাজ্য সভাপতিকে চিঠি দিলেন জেলা কমিটির বেশির ভাগ পদাধিকারী ও মণ্ডল সভাপতিরা। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা কমিটিতে সভাপতি অশোক চক্রবর্তীকে বাদ দিয়ে ১৮ জন পদাধিকারীর মধ্যে ১৩ জন ও ৩৭ জন মণ্ডল সভাপতির মধ্যে ২৮ জন অশোকের বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষকে চিঠি দিয়েছেন।
নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার প্রথম সভাপতি জগন্নাথ সরকার। তিনি রানাঘাটের সাংসদ হওয়ার পরে সেই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে সভাপতি করা হয়। তিনি পরিচিত ছিলেন জগন্নাথের প্রবল বিরোধী হিসাবে। কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয় অশোক চক্রবর্তীকে। তিনি আবার প্রথম থেকেই জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কিন্তু সেই ঘনিষ্ঠতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
দলীয় সূত্রের খবর, যত দিন গিয়েছে জগন্নাথের ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছেন অশোক। এর ফলে জগন্নাথের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে বাড়তে এখন গোষ্ঠী বিবাদের চেহারা নিয়েছে। এরই মধ্যে অশোক অন্য জেলা নেতাদের সঙ্গে সে ভাবে কিছু আলোচনা না করেই জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠ তিন মণ্ডল সভাপতিকে সরিয়ে দেন। তাতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। এখন এই অভিযোগের চিঠি বিবাদকে অন্য মাত্রা দিল। অশোক জেলা সভাপতি হলেও এখনও পর্যন্ত জেলা কমিটিতে জগন্নাথ-ঘনিষ্ঠ লোকই বেশি। বেশির ভাগ মণ্ডল সভাপতিও আছেন তাঁরই সঙ্গে। এখন অশোক ধীরে জগন্নাথের লোকদের সরিয়ে নিজের লোক বসাতে শুরু করাতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। জগন্নাথের অনুগামীরা একযোগে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অশোকের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছেন।
এঁদেরই এক জন, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পঙ্কজ বসুর অভিযোগ, “বর্তমান জেলা সভাপতি নিজের মতো করে গোষ্ঠী তৈরি করছেন। তিনি সাংগঠনিক বিষয়ে অনভিজ্ঞ হওয়ায় একের পর এক ভুল করে যাচ্ছেন।” একই কথা বলছেন ‘বিদ্রোহী’ মণ্ডল সভাপতিরাও। তাঁদের অন্যতম, শান্তিপুরের জেলা পরিষদ ২৮ মণ্ডল সভাপতি সুরেশ মজুমদারের অভিযোগ, “মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই উনি নিজের মতো করে মোর্চা সভাপতি নিয়োগ করছেন। এমনকি মণ্ডলের পদাধিকারীদেরকেও বিভিন্ন মোর্চার সভাপতি করে দিচ্ছেন। দক্ষ ও যোগ্য মণ্ডল সভাপতিদের সরিয়ে দিচ্ছেন কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই।” তাঁর অভিযোগ, “লোকসভা ভোটে যাঁরা জগন্নাথ সরকারকে হারানোর চেষ্টা করেছিল তাদের নানা পদে নিয়ে আসছেন অশোকবাবু। দলের কর্মসূচিতে জগন্নাথ সরকারকে ডাকা হচ্ছে না। ব্যানারে-ফ্লেক্সে তাঁর নাম রাখা হচ্ছে না। এতে কর্মীরা হতাশ। দলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।”
দলের অনেকেরই অনুমান, গোটা ঘটনার পিছনে জগন্নাথের হাত আছে, সাংগঠনিক ক্ষমতা নিজের মুঠোয় রাখতে তিনি মরিয়া। জগন্নাথ অবশ্য দাবি করেন, “এমন কোনও চিঠির কথা আমার জানা নেই। আমাকে জানিয়ে কেউ কিছু করেনি। তাই কোনও মন্তব্য করব না।” অশোকও বলছেন,“এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। যা বলার রাজ্য নেতৃত্ব বলবেন।”