প্রতীকী ছবি।
নবদ্বীপ জোনের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ আনল বিজেপির জেলা নেতৃত্বের একটি বড় অংশ। জেলার প্রায় সর্বত্রই তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষের পরিবেশ তৈরি হলেও নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার বেশির ভাগ কার্যকর্তা প্রথম তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সম্প্রতি তাঁরা দলের রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ওই নেতার বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে অভিযোগও জানিয়েছেন। যদিও দলেরই একটি অংশের দাবি, জেলার গোষ্ঠী রাজনীতির এটাও একটা উদাহরণ হয়ে থাকল।
উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সাতটি সাংগঠনিক জেলার আহ্বায়ক হলেন বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হিসাবে নদিয়া উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব তাঁরই। দলীয় সূত্রে জানা দিয়েছে, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের একাংশের একটু-একটু করে ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে বরাবরই দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, সাংগঠনিক কাজে জেলায় এলে তাঁর জন্য এক শ্রেণির নেতা হোটেল থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়ার এলাহি ব্যবস্থা করেন, যা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদর মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলে দক্ষিণের কার্যকর্তাদের দাবি। লিখিত অভিযোগে তারা এই কথাগুলিই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন।
বিজয়বাবু জেলা সংগঠনের ভিতরে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি নিয়ে চলছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর বিভাজনের রাজনীতি দলের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগকারীদের অন্যতম এক সাধারণ সম্পাদক বলছেন, “বিরোধ মেটানো তো দূরের কথা, বিজয়বাবু ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভাজন তৈরি করে রাখছেন। এতে হয়তো তাঁর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ হচ্ছে কিন্তু দলের মারাত্মক ক্ষতিও হচ্ছে। তিনি কিছু নির্দিষ্ট নেতাকে সঙ্গে নিয়ে চলছেন। তাঁর যা কিছু সেটা ওই মুষ্টিমেয় নেতাদের সঙ্গেই। বাকিদের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন।” একই কথা বলেন দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির এক সহ-সভাপতিও। তাঁর বক্তব্য, “অনেক অভিযোগই আছে বিজয়বাবুর বিরুদ্ধে। দিন-দিন সে সব বাড়তে থাকায় আমরা বাধ্য হয়েছি নেতৃত্বকে জানাতে।”
দিন কয়েক আগে নদিয়া দক্ষিণ জেলা কমিটির ১৮ জন পদাধিকারীর মধ্যে ১১ জন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে শিব প্রকাশ ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের কাছেও লিখিত ভাবে বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজয়বাবু বলেন, “কে কী বলছে, জানি না। আমি যেখানে থাকি কার্যকর্তারা সঙ্গে থাকেন। তাঁরাই সব ঠিক করে দেন।”
’ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি নিয়ে চলা প্রসঙ্গে বিজয়বাবুর বক্তব্য, “দলের নির্দেশের বাইরে আমি কোনও কাজ করি না। যা করি দলের নির্দেশেই করি। আসলে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। দলের ‘সিস্টেম’-এর বাইরে কাজ করতে পারি না। আমরা দলের স্বার্থের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে চলি না।”
অভিযোগপত্রে যাঁরা সই করেছেন তারা সকলেই বিধায়ক জগন্নাথ সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অনেকেই মনে করছেন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে জগন্নাথের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার কারণেই এই সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। জগন্নাথ বর্তমানে নবদ্বীপ জোনের মুখপাত্র। তিনি বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তাই কোনও মন্তব্য
করব না।”