Social Media

ভার্চুয়াল নােচ-গানে মিলল মুক্তির স্বাদ 

এবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী দিবস বদলে যায় আন্তজাতিক প্রতিবন্ধী সপ্তাহে। ডিসেম্বরের ৩ থেকে ৯ সপ্তাহ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। তাতেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলা জুড়ে শুরু হয় উদ্‌যাপন।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোগেট টিনের তৈরি ঘরের সামনে মাটির দাওয়া। তারই উপর নাচছিল মেয়েটা, এক পায়ে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছিল— “ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়...।”

Advertisement

ওই একটি মাত্র পায়ে ভর দিয়ে, কখনও হাঁটু মুড়ে বসে গানের দ্রুত লয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাবলীল ভাবে মুদ্রা বদলাচ্ছিল রূপালি খাতুন। পরনের গাঢ় লাল পোশাক ঝলমল করছিল সকালের রোদ্দুরের মতো। গানের শেষে বারে বারে গাওয়া “তোমারি হউক জয়” যেন তার মতো আশি শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত নৃত্যশিল্পীর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত।

কিংবা ধরা যাক অনির্বাণ দাসের কথা। আশি শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া অনির্বাণকে স্কুলে যেতে পায়ের সঙ্গে হাতের সাহায্যও নিতে হয়। কিন্তু যখন ওই হাত দিয়ে রং-তুলি নিয়ে বসে, তখন ক্যানভাসে জুড়ে তৈরি হয় শুধুই কবিতার মুহূর্ত। একই ভাবে নব্বই শতাংশ মূক-বধির রুবিনা খাতুন শুধুমাত্র দেখে দেখে নিখুঁত উপস্থাপনা করে শাস্ত্রীয় নৃত্য। শুভম রায় বোল তোলে ঢাকে। এ ভাবেই অতিমারির কালে ওরা আবার গান গাইছে, ছবি আঁকছে, কবিতা বলছে।

Advertisement

অনেক দিন পর ওরা ফিরে পাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু, স্যর, চেনা পরিবেশ। আগের মতো। সেই মার্চ মাস থেকে ঘরবন্দি জীবনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শরীর, মন।

এই বছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনল।

অন্যান্য বছরে ৩ ডিসেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসাবে পালিত হয়। রাজ্য জুড়ে নানা অনুষ্ঠান উৎসবের আয়োজন হয়। কিন্তু অতিমারি কালে সে সব বন্ধ। বিশেষ করে ওদের বাড়ি থেকে বেরনোর ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অনেকেরই প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় কম। সুতরাং, আনলকের ছয় তম পর্বে এসেও ওদের মুক্তি ঘটেনি।

এই পরিস্থিতিতে এবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী দিবস বদলে যায় আন্তজাতিক প্রতিবন্ধী সপ্তাহে। ডিসেম্বরের ৩ থেকে ৯ সপ্তাহ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। তাতেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলা জুড়ে শুরু হয় উদ্‌যাপন। দীর্ঘ দিনের বন্দি জীবনে এই সপ্তাহটি যেন নতুন করে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে নানা বয়সের প্রতিবন্ধীদের কাছে।

এই বিষয়ে নদিয়া জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঢ্যাং বলেন, “করোনা কালে ভীষণ ভাবে বিছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম আমরা সবাই। কিন্তু শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা আরও জটিল। ওদের কথা ভেবে এই দুঃসময়ে ওদের পাশে থাকার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’

তিনি জানালেন, প্রতিবন্ধীদের কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌঁছে যাওয়া হচ্ছে। পাঁচটি বিভাগে বাড়িতে বসে তারা নিজস্ব অনুষ্ঠান রেকর্ড করে পাঠাচ্ছে নিজস্ব অঞ্চলের প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকে আসছে জেলায়। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘ওদের উপস্থাপনার উপরে পুরস্কার দেওয়া হবে। আর কোনও কিছুর জন্য ওদের আসতে হবে না। আমরাই ওদের কাছে যাব।”

নদিয়ার আইইডি স্বপনকুমার রক্ষিত বলেন, “বিপুল সাড়া পড়েছে। আমাদের জেলায় প্রতিবন্ধীদের ৩৭টি কেন্দ্র আছে। তাতে কমবেশি ৮১৯০ জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর আছে, যারা প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করছে। সকলে খুশি হয়ে অংশগ্রহণ করছে। আমাদের মোবাইল উপচে পড়ছে ওদের গান, কবিতা, নাচ, আঁকায়।”

গোটা প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত নদিয়ার এক স্পেশাল এডুকেটর শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, “মাসের পর মাস ধরে এই বিশেষ শিশু-কিশোরেরা খুবই দুঃসহ জীবনযাপন করছে। তাদের অভিভাবকেরা কার্যত বুঝতে পারছিলেন না কী ভাবে সামাল দেবেন। চেনা পরিবেশ, প্রশিক্ষক, বন্ধু এবং শারীরিক-মানসিক থেরাপি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিল ওরা। সেই অবস্থায় এমন একটি সপ্তাহব্যাপী আয়োজন ওদের কাছে মুক্তির আকাশ হয়ে উঠেছে।”

আজ, ৯ ডিসেম্বর বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে পুরস্কার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement