রুজিতে তালা
Corona Virus

খদ্দেররা আসছেন না, কিন্তু লকডাউনই চাই

তিনিই সব কিছু পরিষ্কার করেন। আর তাঁরই এখন করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউনে সংসার না চলার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

ইন্দ্রাশিস বাগচী 

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০১:০৪
Share:

জামা কেচে ইস্ত্রি করেছেন, নিয়ে যাচ্ছেন না কেউ। নিজস্ব চিত্র

ছোঁয়াছুঁইয়ের বিচার তাঁকেই সব থেকে মানতে হয়। তিনিই সব কিছু পরিষ্কার করেন। আর তাঁরই এখন করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউনে সংসার না চলার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তিনি ছোটন সরকার। পেশায় ধোপা।

Advertisement

হোটেলের বিছানার চাদর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জামাকাপড়—এ সব পরিষ্কার করেই ২৫ বছর ধরে সংসারের খরচ চালিয়ে আসছেন ছোটন। বহরমপুরের ধোপঘাটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ছোটনের একতলা বাড়িতে কিন্তু আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। বন্ধ হোটেল, স্তব্ধ শহর। ছোটন বলছেন, ‘‘লকডাউনে হোটেল বন্ধ থাকায় সেখান থেকে আর কোনও কাজ পাচ্ছি না। আবার পরিচিত যে খদ্দেররা আছেন, তাঁরাও এখন জামা কাপড় পরিষ্কার করতে আমাদের কাছে আসছেন না।’’ তবে, এত সমস্যার মধ্যেও লকডাউনকে সমর্থন করছেন ছোটন। লকডাউনের নিয়মাবলিগুলিও অক্ষরে অক্ষরে মানছেন। মুখে মাস্ক পরে ১ মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছোটন বলেন, ‘‘আগে প্রাণ, পরে কাজ। প্রাণ না থাকলে কাজ করব কী করে।’’

ছোটনের মতোই বহরমপুরের এই ধোপঘাটিতে বাস করে প্রায় ১৫ জন ধোপার পরিবার। বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করেন মহিলারাও। তবে সেই কাজ ১১ দিন থেকে বন্ধ। তাঁরা নিজেরাও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন। ফলে ধোপা বাড়ির গরম ইস্ত্রি আজ তাপ হারিয়েছে।

Advertisement

ধোপঘাটির বাসিন্দা সুদাম রজকের পরিবারে ৮ জন সদস্য। তাঁদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার একমাত্র ভরসা সুদেবই। স্থানীয় একটি লজের চাদর, টাওয়েল পরিষ্কার করার পাশাপাশি পরিচিত কিছু লোকের জামাকাপড় কেচেই জীবিকা উপার্জন করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বংশ পরম্পরায় জামা কাপড় পরিষ্কার করে আসছি। এরকম সমস্যার মুখে কোনও দিন পড়িনি। বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি চড়ছে না। কী করে যে বাকি দিনগুলো কাটবে কে জানে।’’

ধোপঘাটিতে রয়েছে একটি পুকুর। সেই পুকুরের জলেই আগে জামাকাপড় কাচা হতো। ধোপাদের দাবি, বেশ কিছু বছর থেকে সেই পুকুর নোংরা হওয়ায় বাড়ির জলেই তাঁরা জামাকাপড় পরিষ্কারের কাজ করছেন। প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে উনুন। সেই উনুনে আঁচ দিয়েই জামাকাপড় ইস্ত্রি করা হয়। তবে সেই উনুনে ১১ দিন ধরে আঁচ ধরেনি।

ধোপঘাটির আর এক বাসিন্দা সন্তোষ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা কাজ হিসেবে টাকা পাই। মাস গেলে প্রায় ৩০০০ টাকা উপার্জন হয়। সেই টাকাতেই কোনও রকমে সংসার চলে। এখন কাজ বন্ধ। ফলে রেশনের চাল, ডাল আর লোকজনে যা কিছু সাহায্য করছেন, তাই দিয়ে খেয়ে পড়ে কেটে যাচ্ছ।’’ ধোপার কাজ করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন শীলা রজক। বছর চারেক আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। শিলা বলেন, ‘‘বিধবা ভাতা পাই না। ধোপার কাজ করে যেটুকু উপার্জন হত। এখন তা-ও বন্ধ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement