তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে আইএমএ। —ফাইল চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সমালোচনা করে একের পর এক হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে চিঠি দিল ডাক্তারদের সংগঠন আইএমএ। বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ করে চিঠিতে নিজেদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় উত্থাপন করেছেন চিকিৎসক সংগঠন আইএমএর যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য। সোমবার আরজি করের মামলায় হুমায়ুনের বিষয়টিও শীর্ষ আদালতে উঠতে পারে। যদিও এই চিঠিকে পাত্তা দিচ্ছেন না রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক। রবিবার হুমায়ুন বলেন, ‘‘আমরা আইন তৈরি করি। কোনটা আইনসঙ্গত আর কোনটা বেআইনি খুব ভাল করে জানি। কারও জন্য যদি আমাকে জেলে যেতে হয়, তবে জামিন পাওয়ার পর ৫০ হাজার লোক নিয়ে জমায়েত করব। অপরাধ না করে যদি শাস্তি পাই, তবে ফিরে এসে অপরাধ করতে কুণ্ঠাবোধ করব না।’’
চিকিৎসক রঞ্জন আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ১৬-১৭ এবং ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও ভয়মুক্ত পরিবেশের কথা বলেছিলেন। সেখানে রাজ্যের শাসকদলের এক জন বিধায়ক লাগাতার চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের মারধরেরও হুমকি দিয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। আইন নিজের হাতে নিতে উস্কানি দিয়েছেন মানুষকে। হুমকির জেরে ডাক্তারদের নিরাপত্তা বাড়ানোরও দাবি জানালেও সে ভাবে ব্যবস্থা হয়নি। যে হেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি এবং আন্দোলনের বার বার সমালোচনা করেছেন হুমায়ুন। তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়। হুমায়ুন বলছেন, চিকিৎসকদের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে ঠিকই। কিন্তু শাসকদলের তেমনই ভোটার রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের যেমন আন্দোলন করার অধিকার আছে, বাংলায় তৃণমূলেরও ৩ কোটি ভোটার আছে। ১০ হাজার মাঠে নামলে কী হবে, তখন বুঝবে...।’’ পাশাপাশি রোগী পরিষেবা বিঘ্নিত করে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ‘চ্যাংড়ামো’ বলে অভিহিত করেছেন বিধায়ক। তিনি এ-ও জানান, তাঁর অবস্থানের জন্য প্রয়োজনে তিনি জেলে যেতেও রাজি।
এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে রোগীমৃত্যুর প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার হুমায়ুন বলেন, ‘‘ডাক্তারদের দ্বিতীয় ভগবান বলা হয়। সেই ভগবানের আচরণ কী? সিগারেট নিয়ে নাচানাচি করছেন, ঢাক-ঢোল বাজাচ্ছেন। এ সব কি আন্দোলনের নামে চ্যাংড়ামো নয়?’’ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল বিধায়কের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে নোংরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার জুনিয়র ডাক্তাররা। যাঁরা আন্দোলনের নামে অসভ্যতা শুরু করেছেন।’’ হুঁশিয়ারি দিয়ে হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘সংখ্যায় যদি বিচার করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা তা হলে দেখতে পাবেন, ওঁরা সারা রাজ্যে মাত্র সাড়ে সাত হাজার। সব চিকিৎসক মিলিয়ে সর্ব মোট মাত্র চুরানব্বই হাজার। আমরা তিন কোটি তৃণমূল কর্মী। রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করব। মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ঘেরাও করব। তাতে আমার যা হওয়ার হোক।’’
তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘কয়েক জন ডাক্তার ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এ সব করছেন। ওঁদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছি। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে কী হয়, জুনিয়র ডাক্তারদের ব্যবহার... সরকারের এসি-র ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে, বিল্ডিংয়ে ঘুমিয়ে তাঁদের কী আচরণ আমি সব লক্ষ্য রাখছি। আমি যে দিন সামনাসামনি হব, সে দিনই ওঁদের বলব আপনার কী করেছিলাম যে আপনি আমার নামে এফআইআর করলেন? বহরমপুর থানা আবার আমার বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। আমি জামিন নিইনি। জামিন নেবও না। আমাকে গ্রেফতার করুক। জেলে ঢুকিয়ে দিক। যে দিন মুক্তি পাব, সে দিন হিসেবনিকেশ বুঝে নেব।’’