ইফতার: ভাবতা আজিজিয়া হাইমাদ্রাসায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
আজ মুর্শিদাবাদের নবাব নেই, নবাবিও নেই। কিন্ত নবাবি আমলের ইফতারি ও সেহরির ঐতিহ্য থেকে গিয়েছে। রাজ্যের বিচার বিভাগের অধীন থাকা ‘মুর্শিদাবাদ এস্টেট’ নবাবি আমলের রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। প্রথা মেনে মুর্শিদাবাদ এস্টেটের আর্থিক সহায়তায় রমজান মাসে ইফতারি ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়ে আসছে।
প্রতিদিন সেখানে প্রায় পৌনে দুশো মানুষের ইফতারি ও সেহরির(ভোর রাতে খাবার) ব্যবস্থা করা হয়। শুক্রবার মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তরফে সেহরির জন্য ‘মটন বিরিয়ানি’র ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেদিন সকাল থেকে হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালার সামনে থাকা ইমামবাড়ার ভিতরে বিরিয়ানি তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। প্রায় পৌনে দুশো প্লেট বিরিয়ানি তৈরি করে সেহেরির জন্য ইমামবাড়া থেকে তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এদিন বিকেলে কেল্লা নিজামত চত্বরে থাকা চক মসজিদে অন্যদিনের মতো ইফতার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
মুর্শিদাবাদে এস্টেটের ম্যানেজার জয়ন্ত মণ্ডল শুক্রবার বলেন, ‘‘গোটা রমজান মাস জুড়ে সেহরি ও ইফতারির ব্যবস্থা করা হয় মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তরফে। সেই মতোই শুক্রবারও ইফতারি ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেহরির জন্য সেদিন মটন বিরিয়ানি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এস্টেটের তরফে বছরভর মোট ২৩টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ব্যবস্থা করা হয়। তার মধ্যে রমজান মাস জুড়ে ইফতার ও সেহরির খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এস্টেটের তরফে।’’
হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালার সামনে রয়েছে নবাবি আমলের ইমামবাড়া। সেখানে ইফতার ও সেহরির খাবার তৈরি করা হয় মুর্শিদাবাদ এস্টেটের তরফে। রমজান মাসে প্রতিদিন সকাল থেকে জনা দশেক কর্মী ইফতার ও সেহরির খাবার তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। রাঁধুনিরা যেমন রান্নার কাজ শুরু করেন, তেমনই অন্য কর্মীরা ফল কেটে প্রস্তুতি নেন। ইমামবাড়ার ভিতরে তন্দুর বসিয়ে নাদ রুটি তৈরি করা হয়। প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারের জন্য প্রায় ২০ কেজি ময়দা ও আটা দিয়ে প্রায় ৫০০ পিস নাদ রুটি তৈরি করা হয়। এছাড়া পাঁচ কেজি ছোলার ডাল তৈরি করা হয়। প্রতিদিন বেলা তিনটের মধ্যে সেহরির জন্য দুটি করে নাদ রুটি ও ডাল দেওয়া হয়। এছাড়া চক মসজিদে ইফতারির পাতেও ফলের সঙ্গে একটি করে নাদ রুটি দেওয়া হয়। গোটা রমজান মাসে দু’দিন সেহরিতে মটন বিরিয়ানি ও বাকি দিনগুলিতে নাদ রুটি ও ছোলার ডাল দেওয়া হয়।
ইফতারির থালায় কী কী থাকে? মুর্শিদাবাদ এস্টেটের এক কর্মকর্তা জানান, ইফতারির থালিতে আপেল, কলা, শসা, তরমুজ, আঙুর থাকে। সেই সঙ্গে ভেজানো ছোলা ভাজা, মটরের ঘুগনি, একটি করে নাদ রুটি, একটি বেগুনি ও একটি ডাল বড়া দেওয়া হয়।মুর্শিদাবাদ এস্টেটের কর্মকর্তারা জানান, নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জার সময় থেকে এ ভাবে রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারির ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। আর নবাবি আমলের সেই ইফতারি ও সেহরিতে খাবারের এলাহি আয়োজন করা হত।