আইসি পিন্টু সরকার।
এক দিকে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বের পুরোপুরি নিরসন না হওয়া, অন্য দিকে বিজেপির আগের চেয়ে ভাল ফল করার আশা। সব মিলিয়ে ভোটের দিন অশান্তির আশঙ্কা এড়ানো যাচ্ছে না করিমপুরে। অথচ ঠিক এই সময়েই ১০ দিনের জন্য ছুটিতে চলে গিয়েছেন করিমপুুুুর থানার আইসি।
কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ শে জুন থেকে ৮ জুলাই অর্থাৎ ভোটের দিন পর্যন্ত ছুুুটি নিয়েছেন করিমপুরের আইসি পিন্টু সরকার। ভোট মিটলে তিনি কাজে ফিরবেন। তাঁর জায়গায় আইসি-র কাজ সামলাতে কৃষ্ণনগর থেকে আনা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সঞ্জয়কুমার রায়কে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে যিনি করিমপুরে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলেছেন, এই মোক্ষম সময়ে তাঁর ‘ছুটি’ রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। শাসক দলের চাপেই তাঁকে সরানো হয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধীরা। পুলিশ অবশ্য তা মানতে নারাজ। এসডিপিও (তেহট্ট) শুভতোষ সরকার বলেন, “পিন্টুবাবু শারীরিক কারণে দশ দিনের ছুটি নিয়েছেন।”
ঘটনাচক্রে, গত ২৯ জুনই ১৫ দিনের ছুটিতে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থানার আইসি সুমন রায়চৌধুরী। পরিবারের কারও অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। শুক্রবার, ৩০ জুন ছুটিতে গিয়েছেন ওই জেলারই ময়না ও কোলাঘাট থানার আইসি। একের পর এক থানার আইসি-র ‘ছুটি’ প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের সন্দেহের উদ্রেক করছে। গত পুরভোটে রাজ্যে একমাত্র তাহেরপুর পুরসভা বামেদের হাতে যাওয়ার পরে সেখানকার ওসি-র ‘ক্লোজ়’ হওয়ার কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে অনেকের।
পিন্টু সরকার করিমপুর থানার আইসি হয়ে আসেন ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। অর্থাৎ গত বিধানসভা ভোটের সময়ে তিনিই নদিয়ার এই প্রান্তিক থানার দায়িত্বে ছিলেন। তা হলে, এ বার তিনি ‘ছুটি’ নিলেন কেন?
করিমপুর ১ ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ অধিকারীর বক্তব্য, “আমাদের বিশ্বাস, তৃণমূলের চাপে করিমপুর থানার আইসি-কে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হয়তো তাঁকে এমন কোনও অনৈতিক কাজ করতে বলা হয়েছিল, যা করতে তিনি রাজি হননি।” সিপিএমের করিমপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সন্দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “অসুস্থতার কারণে একেবারে গুণে-গুণে ভোটের দিন পর্যন্তই ছুটি নিতে হল? এ কেমন অসুস্থতা?” তাঁর সন্দেহ, “হয়তো তৃণমূলের ভরাডুবি বাঁচাতে তিনি সাহায্য করবেন না বলে শাসকদের মনে হয়েছে।”
স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, করিমপুর থানার মধ্যে যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পড়ে সেই করিমপুর ১ ও ২, নন্দনপুর ও রহমতপুর পঞ্চায়েতে এ বার জোরালো তৃণমূল-বিরোধী হাওয়া রয়েছে। করিমপুরের প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়কের শিবিরের মধ্যে চলা ‘দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ’ উপরিতলে কিছুটা প্রশমিত হলেও তলায়-তলায় তার আঁচ ধিকিধিকি করে জ্বলছে। তা আখেরে বিরোধীদের, বিশেষত বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে।
বিজেপির করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মৃগেন বিশ্বাসের দাবি, “এখন পুলিশকে চাপ দিয়ে বিরোধী দলগুলিকে হেনস্থা করে জেতার চেষ্টা করছে শাসক দল। সেই জন্য নন্দীগ্রাম থানার আইসি-র মত এখানকার আইসি-কেও ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।” তৃণমূলের করিমপুর ১ ব্লক কমিটির সভাপতি আশিসকুমার চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, "যত আজগুবি মিথ্যা দাবি! আমাদের দলের তরফে কোনও অনৈতিক কাজের জন্য আইসি-কে চাপ দেওয়া হয়নি।"
আবার রাজ্য পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, করিমপুরে তৃণমূলের বিবদমান দুই পক্ষের একটির তরফে আইসি-র ‘ছুটি’ চেয়ে উঁচুমহলে দরবার করা হয়েছিল। বার বার চেষ্টা করেও ছুটিতে যাওয়া আইসি পিন্টু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “অসুস্থতার কারণে আইসি ছুটি চেয়েছিলেন। তা মঞ্জুর হয়েছে।”