ছবি গৌতম প্রামাণিক
কলেজ জীবনে সহপাঠীদের অনেকেই আমাকে মেয়েলি আচরণের জন্য নানা কথা বলে বিদ্রূপ করত। এমনকী আমার শরীরের গোপন অঙ্গের উল্লেখ করে বদ আচরণ করতেও ছাড়ত না। এ যন্ত্রণা আমার শুরু হয়েছিল স্কুল জীবন থেকেই। স্কুলে আমি বাধ্য হয়ে কোনের দিকে একা একটি বেঞ্চে বসতাম। আমাকে ‘মেয়েলি’, ‘বৌদি’, ‘লেডি বাপ্পা’ বলে বিদ্রূপ চলত প্রকাশ্যে। আমি ছোট থেকেই দিদির চুড়ি, শাড়ি নিয়ে সাজতাম। তাই নিয়ে মা আক্ষেপ করতেন। বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে মা কিছু দিন আগে মারা গিয়েছেন। আমার এক বন্ধুও আমার মতো। এ কারণে তার দাম্পত্য জীবনে ছেদও পড়ে। তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হতবাক হতে হয়েছে। সেই চিকিৎসক আমার সাথীকে দেখার পর বলেন, ‘‘শক থেরাপি দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ এমন কথা শোনার পর ঘৃণায় সেই চিকিৎসকের কাছ থেকে আমার বন্ধু মুখ ফিরিয়ে নেয়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মনে হচ্ছে, নতুন করে মুক্ত হলাম যেন! আমার দেশের স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগস্ট। গত বৃহস্পতিবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে আমার স্বাধীনতা দিবস দু’টি। ইংরেজদের পরাধীনতা থেকে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। কিন্ত আমরা যাঁরা তৃতীয় লিঙ্গের রূপান্তরকামী, তাঁরা পদে পদে এত দিন পরাধীন থেকেছি নানা ভাবে, নানা স্তরে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে দ্বিতীয় বার স্বাধীনতা লাভ করলাম। সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, ‘সমকামিতা অপরাধ নয়।’ ওই রায়ে আমরা যাঁরা এত দিন লাঞ্ছিত হয়েছি, কিন্তু বিচারের দোরগোড়ায় যেতে সাহস করিনি, তাঁরা ওই রায়ের পর থেকে মানসিক শক্তি অর্জন করেছি। রায় দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি জার্মান কবিকে উদ্ধৃত করেন— ‘‘আমি যা আমি তা-ই। তেমন করেই গ্রহণ করো আমাকে।’’ সেই উচ্চারণ সংবাদমাধ্যমে জানার পরে আনন্দাশ্রু আর বাগ মানেনি।