হুমায়ুন কবীর। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট দেওয়া নিয়ে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘোচেনি। সেই আবহে ভোটের ফল ঘোষণার পর, আবার ফুঁসে উঠলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। জয়ী নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদের জেলার সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়ের অপসারণের দাবিও তুলেছেন ‘বিদ্রোহী’ হুমায়ুন। তাঁকে দলীয় অনুশাসন মেনে চলার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। শুক্রবার ২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ পালন করতে চলেছে তৃণমূল। তার আগে হুমায়ুনের এই হুঙ্কার তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জয়ী নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেন হুমায়ুন। এর পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘নির্দলেরা তো তৃণমূলেরই লোক। আমার লোক। এটা ওপেন (খোলাখুলি) বলেছি। আমি নির্দলদের জন্য ওপেন করেছি। এখনও করব। তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রভিশন (বিধান) থাকলে, নিলেই তো হয়ে যায়। তারা আরও স্বাধীন হয়ে যায়।’’ শুক্রবার ২১ জুলাই। দলের ‘শহিদ দিবস’। তার আগে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হুমায়ুন বলেন, ‘‘আমাদের সিদ্ধান্ত, শাওনি সিংহ রায়কে পদ থেকে না সরানো পর্যন্ত আমরা দলীয় বৈঠকে যাব না। তাতে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে।’’
হুমায়ুনের মন্তব্য নিয়ে নাম না করে শাওনি বলেন, ‘‘ভোট হল। রেজাল্ট বেরোল। সেটাও দলের ফেবারে থেকে। তার পরেও যদি কেউ হাপু গান গায় তা হলে আমার কিছু যায়-আসে না। এর উত্তর রাজ্য নেতৃত্ব দেবে। রাজ্য তো আর ধৃতরাষ্ট্র নয়। রাজ্য সবই দেখছে। কারণ, কারও কোনও অধিকার নেই দলের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড করার।’’
২১ জুলাইয়ের আগে হুমায়ুনের এই বক্তব্য অস্বস্তি তৈরি করেছে জোড়াফুল শিবিরে। এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘দল তাঁকে মন্ত্রী করেছে, দলই তাঁকে বিধায়ক করেছে, তাই তাঁর উচিত দলের অনুশাসন মেনে চলা। কিছু বলার থাকলে দলের ভিতরে নির্দিষ্ট জায়গায় বলতেই পারেন। তার পরিবর্তে যেটা করছেন সেটা দলবিরোধী কাজের সমান। গোটাটাই দল লক্ষ্য রাখছে।’’
রাজ্যে সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছিল হুমায়ুনের। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই হুমায়ুন নেমেছিলেন এলাকার নির্দল প্রার্থীদের একাংশের হয়ে। ভরতপুরের বিনোদিয়া এলাকায় নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনে সভাও করেন হুমায়ুন। সেখান থেকে নিশানা করেন শাওনিকে। অথচ নির্দল প্রার্থী নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দলদের সমর্থন করলে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দেন অভিষেক। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে নতুন নতুন অস্বস্তি তৈরি করে চলেছেন হুমায়ুন।