চড়া আনাজের দাম।
দিন কয়েক আগেও একশো টাকা নিয়ে বাজারে গেলে থলে খানিকটা ভরত। এখন এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজের দামই ৮০ টাকা! শাক-আনাজের এমন আকাশ ছোঁয়া দামের পিছনে পাইকারদের ‘কারচুপি’ নাকি অকালবর্ষণ তা নিয়ে চাপানউতর চলছেই। তবে এত সবের মাঝে হাত পুড়ছে সেই মধ্যবিত্তের। করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ থেকে নাকাশিপাড়া বাজারে গিয়ে বেজার হওয়ার ছবিটা সব জায়গায় একই রকম। চন্দ্রমুখী আলু প্রতি কিলোগ্রাম ২৮ টাকা, জ্যোতি ২২ টাকা। ছোট ফুলকপি ১৫ টাকা, বড় ৩০-৪০ টাকা। পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকার আশেপাশে। ছোট, মান খারাপ এমন পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ৭০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। অল্প পরিমাণ নতুন আলু বাজারে উঠেছে দাম ৫০ টাকা। অন্য আনাজেরও হাল একই রকম।
মানুষ এখন সারা বছর নানারকম শাক-আনাজ খেতে অভ্যস্ত হলেও শীতকাল রকমারি আনাজের সঠিক সময়। ফলন বেশি হয় বলে দামও থাকে সস্তা। কিন্তু শীতের শুরুতে সেই ছবিটা অনেকটাই ফিকে। চাষিদের একাংশ জানাচ্ছেন, অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে শীতকালীন আনাজ চাষের প্রস্তুতি শুরু করেন। এ বারে প্রথমে দুর্গাপুজোর আগে থেকে গড়ে পনেরো দিন অন্তর নিম্নচাপের বৃষ্টিতে শীতের চাষ দারুণ ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কোনও ফসল তৈরি হওয়ার মুখে বৃষ্টি নেমেছে। চাষি আগে ভাগে ফসল তুলে মাঠ ফাঁকা করেছেন। কোনও ফসলের বীজতলা গিয়েছে ভেসে। পিছিয়ে গিয়েছে গাছ লাগানোর সময়। যার প্রভাব এখন বাজারে গেলেই মালুম হচ্ছে।
নবদ্বীপ বাজারের খুচরো আনাজ বিক্রেতা উত্তম ঘোষ বা বাবন ঘোষেরা এ জন্য সরাসরি দায়ী করছেন অকালবৃষ্টিকে। তাঁরা জানান, পুজোর আগে থেকে যে ভাবে বৃষ্টি হয়েই চলেছে তাতে মাঠের সব আনাজের ক্ষতি হয়েছে। এখন মাঠ ফাঁকা। যাঁদের কাছে মজুত আছে তাঁরা ইচ্ছামতো দাম চড়িয়ে দিচ্ছে। উত্তম ঘোষ বলেন, “রাতারাতি দাম চড়েছে পাইকারি বাজারে। আমাদের কিছু করার নেই।”
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, “এ বারেও আমি দশ-বারো টাকায় একজোড়া কপি কিনেছি। এখন পনেরো টাকার নীচে কিছু নেই।” তাঁর কথায়, “২৮ টাকায় চন্দ্রমুখী আলু সাম্প্রতিক কালে কিনতে হয়নি। আলুর ক্ষেত্রে অভাব সৃষ্টি করে ইচ্ছাকৃত ভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে অন্য আনাজের স্থানীয় সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। যতদিন না নতুন করে খেত থেকে আনাজ সরাসরি বাজারে আসবে ততদিন বাজারের এই অবস্থা বিশেষ বদল হবে বলে মনে হয় না।” নদিয়ার চাষি মানিক হালদার বলেন, “সবকটি নিম্নচাপ গড়ে সাত থেকে পনেরো দিন পিছিয়ে দিল আমাদের। জমি তৈরি করে নতুন ফসল ওঠা পর্যন্ত বাজার কী হবে কিছুই বলা যাবে না।”
অন্য দিকে, নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির যুগ্ম সম্পাদকদের একজন গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “শীতকালীন আনাজ বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। ও দিকে আলুর দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে এ বারের নতুন আলু বাজারে আসতে বেশ কিছুদিন দেরি হবে এটা বুঝে কেউ কেউ স্টোরের আলু ধরে রেখে দাম বাড়িয়ে মুনাফা তুলছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকার নজর না দিলে মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
যদিও আনাজের পাইকার অরুণ সিংহ বলেন, “মাঠে গেলেই বুঝতে পারবেন কী অবস্থা। তেমন কোনও আনাজ নেই। ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মেলানো যাচ্ছে না। এমনিতে নদিয়ার বাজারে স্থানীয় ফলনই বিক্রি হয়। বাইরের আনাজ বিশেষ দরকার হয় না। জেলার মাঠ ফাঁকা হওয়ায় তাই দাম চড়ছে।” আলু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্জাবের নতুন আলু ঢুকতে শুরু করলেই দাম কমবে।’’
নদিয়া উপ কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “এই মূল্যবৃদ্ধি যতটা না কৃষিজ কারণে, তার থেকে অন্য কারণ অনেক বেশি। এত বেশি দাম হওয়ার মতো অবস্থা নয়। এমনিতে নদিয়া জেলায় বুলবুলের প্রভাব তেমন পড়েনি। যেটুকু সমস্যা হয়েছে, তাড়াতাড়ি কেটে যাবে।”
• পুরনো জ্যোতি আলু: ২২ টাকা • পুরনো চন্দ্রমুখী আলু: ২৮ টাকা • নতুন আলু: ৫০ টাকা • পেঁয়াজ: ৭০-৯০ টাকা • পুরানো আদা: ১০০ টাকা • ফুলকপি (পিস): ১৫-৩০ টাকা • বাঁধাকপি: ৪০-৫০ টাকা • বেগুন: ৭০-৫০ টাকা • পালং শাক: ৫০-৬০ টাকা • মুলো: ৩০-৪০ টাকা • কুমড়ো: ২০ টাকা • শিম: ৪০-৬০ টাকা • চালকুমড়ো লাউ: ২৫-৩০ টাকা • ধনেপাতা: ৪০-৭০ টাকা • এঁচোড় (অসম): ৫০-৬০ টাকা • টোম্যাটো: ৬০ টাকা • গাজর: ৮০-১০০ টাকা • ক্যাপসিকাম: ২০০ টাকা • কাঁচালঙ্কা: ৫০-৭০ টাকা *দর কিলোগ্রাম প্রতি