লালবাগে মহরমের জুলুস। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মুর্শিদাবাদ শহরের কেল্লা নিজামত চত্বরে থাকা ইমামবাড়া থেকে আমানিগঞ্জের কারবালা পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। মহরমের জুলুসের এই তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বুধবার সকালে রীতি মেনে ইমামবাড়া থেকে মহরমের বড় জুলুস বেরোয়। কেল্লা নিজামত চত্বর ঘুরে দক্ষিণ দরজা হয়ে পাঁচরাহা মোড় পর্যন্ত পৌঁছতেই সময় লেগে যায় ঘণ্টা দুয়েক। বাকি রাস্তা পৌঁছতে পৌঁছতে আরও প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সেই জুলুসে ইমাম হোসাইনের সমাধী স্মারক, যুদ্ধাস্ত্রের প্রতীক, দুলদুল ঘোড়া ছিল। আর তা দেখতে রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদে ভিড় জমিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ শহরের বাসিন্দা থেকে শুরু করে এই শহরে আসা পর্যটকেরা। বুধবার মুর্শিদাবাদ এস্টেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বিঘ্নে মহরমের
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ম্যানেজার দেবব্রত রায় বলেন, ‘‘মহরমের শোক পালনের অনুষ্ঠান এ দিন নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে। এ দিন সকাল আটটার সময় ইমামবাড়া থেকে জুলুস বেরোয়। দুপুরে আমানিগঞ্জে কারবালায় সেই জুলুস পৌঁছয়। সেখানে রীতি মেনে মহরমের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। মহরমকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’ সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বরাবরের মতো এ বারেও মহরমকে কেন্দ্র করে পর্যটকেরা ভিড় জমিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ শহরে। শীতের মরসুমের পরে দীর্ঘ দিন পর্যটক কম আসছিল। তার পরে মহরমের ক’দিন এখানে পর্যটক আসায় বেচাকেনা ভাল হয়েছে। তাতে খুশি হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’’
অল বেঙ্গল ইমাম মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্টের রাজ্যের সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস জানান, হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাসের নাম হল ‘মহরম’। বিভিন্ন বছরে এই মাসের ১০ তারিখ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। শিয়া মুসলিমরা ১ মহরম থেকে ১০ মহরম পর্যন্ত শোক দিবস পালন, লাঠি খেলা, শরীরকে কষ্ট দিয়ে রক্ত বের করা (মাতম করা), কাঠের আগুনের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া (আগমাতম), সাজানো দুলদুল ঘোড়া, ইমাম হোসাইনের সমাধি স্মারক সহকারে জুলুস বের করা-সহ নানা অনুষ্ঠান করেন। অন্যদিকে সুন্নি মুসলিমদের অনেকেই ইমাম হোসাইনের শহিদের দিনটি মানেন, তবে প্রকাশ্যে এ ভাবে নয়। তাঁরা ওই দিনে রোজা রাখেন, গরিব লোকজনকে সাহায্য করেন। এবারেও রীতি মেনে সে সব শোকের অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ এস্টেটের এক আধিকারিক জানান, গত ৭ জুলাই মহরমের চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে কার্যত মহরমের শোক পালনের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। ৭ জুলাই (চাঁদ রাতে) মজলিস (মহরমের বিয়োগান্তক ঘটনা নিয়ে ধর্মীয় আলোচনা, প্রার্থনা) শুরু হয়েছিল। বুধবার মহরমের শোক পালন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। শুধু মুর্শিদাবাদ শহর নয়, বহরমপুর থেকে শুরু করে ডোমকল, জলঙ্গি, সুতি সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ দিন মহরমের উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে।