n ঝকঝকে ও ঝাপসা: ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল জেলা জুড়ে। যার জেরে বাজার-ঘাটে লোকজন এমনিতেই কম বেরোচ্ছেন। এ বারে তার দোসর হয়েছে হাড়কাঁপানো শীত আর জমাট কুয়াশা।
সুনসান বাজার
দিনের বেলায় বাজারহাটে কিছু লোকজন দেখা গেলেও সন্ধ্যার পরে খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর ছেড়ে বেরোতে চাইছেন না অনেকেই। বহরমপুর ক্লথ মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘প্রতিবাদ- আন্দোলনের জেরে ভেঙে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় গ্রাম থেকে লোকজন খুব কম আসছেন। গত চার দিন থেকে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। ফলে সন্ধ্যার পরে শহরের লোকজনও বাজারমুখী না হওয়ায় ব্যবসার হাল খুব খারাপ।’’
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক স্বপনকুমার ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘এই শীতে বাজারে লোকজন কম আসছেন।’’
দুর্ঘটনা রুখতে
শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তার বাঁকে ওত পেতে থাকে বিপদ। কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার জেরে দুর্ঘটনার নজির মুর্শিদাবাদে কম নেই। কুয়াশা পড়তেই আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর ও পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়ির চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়। ঘন কুয়াশা পড়লে চালকদের কিছুক্ষণ গাড়ি দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির গতিবেগও কম রাখার কথা বলা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলছেন, ‘‘শীতের রাতে কুয়াশাও যেমন পড়ে, তেমনি রাতের দিকে চালকদের চোখও লেগে আসে। এ সব কারণে চালকদের সতর্কও করা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহা বলেন, ‘‘আমরা বাসের চালক ও হেল্পারদের এ বিষয়ে সচেতন করেছি। নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর কথাও বলা হয়েছে। দূরপাল্লার বেশিরভাগ বাসে ফগ লাইট লাগানো হয়েছে।’’
জলপথে সতর্কতা
কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় স্থলপথের মতো জলপথেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ফেরিঘাটগুলিতে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘন কুয়াশা পড়লে ফেরিঘাটে নৌকা চালাতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যাত্রীদের সহায়তায় আমরা সব সময় প্রস্তুত। প্রতিটি নৌকায় লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। প্রতিটি ঘাটে অতিরিক্ত একটি করে নৌকাও রয়েছে। বিপদ এড়াতে জলসাথীরাও নজরদারি চালাচ্ছেন।’’
খেতের যত্ন
কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শীত ও কুয়াশা দু’টি আলাদা বিষয়। শীতকালীন ফসলের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুয়াশা পড়লে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বোরো ধানের বীজতলা, সর্ষে, মসুরের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
কৃষি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য প্রতিদিন সকালে পাটকাঠি দিয়ে বীজতলার উপরে জমে থাকা কুয়াশার আস্তরণ ভেঙে দিতে হবে। প্রতিদিন বীজতলার জল পরিবর্তন করে নতুন জল দিতে হবে। সেই সঙ্গে কার্বেনডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রন স্প্রে করতে হবে। একই ভাবে কুয়াশার কারণে মসুরে ‘গ্রে মোল্ড’ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কার্বেনডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রন স্প্রে করতে হবে।
নজর সীমান্তে
শীতে কুয়াশার আড়ালকে কাজে লাগায় পাচারকারীরা। এ বারেও শীত পড়তেই পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘন কুয়াশাকে আড়াল করে তারা পাচারের চেষ্টা করছে। বসে নেই বিএসএফও। কাঁটাতারের বেড়া লাগোয়া এলাকায় বিএসএফ টহলদারি যেমন বড়িয়েছে, তেমনি নদীপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি সীমান্তরক্ষীদের। সতর্ক বিএসএফ, তক্কে তক্কে পাচারকারীরাও।
সুস্থ থাকতে
শীতে নানা রকম অসুখ-বিসুখের সম্ভবনা থাকে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের উপর প্রভাব বেশি পড়ে। জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক আবু তাহের বলছেন, ‘‘কোনও ভাবেই যেন ঠান্ডা না লেগে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। গরম পোশাক পরুন। ঠান্ডা লাগলে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই এই সময় জল গরম করে ফুটিয়ে খাওয়া ভাল। সবুজ আনাজ এবং মরসুমি ফল খান। সময় পেলে কিছুক্ষণ রোদে বসুন।’’