স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে তাঁকে খুনের অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্তে পুলিশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
৫ মাসের শিশুসন্তানকে রেখে এক বধূর রহস্যমৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানা এলাকায়। মৃতার নাম জুলেখা বিবি। ২২ বছর বয়সি ওই বধূর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, মুখে অ্যাসিড ঢেলে খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে। আর ওই খুনের নেপথ্যে জামাইয়ের পরকীয়া দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার বাপের বাড়ি হরিহরপাড়া থানার রুকুনপুর গ্রামে। ২ বছর আগে নসিপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল খলিফা নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় জুলেখার। দম্পতির ৫ মাসের একটি শিশুকন্যা রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া লেগে থাকত। দু’সপ্তাহ আগে এমনই এক ঝামেলা চলার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃতার এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘বৌদির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে আশরাফুলের। দীর্ঘ দিন ধরে ওই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে রয়েছে ও। আর জুলেখা সেটা জানত। তাই নিয়ে নিত্য অশান্তি হত। ওই ঘটনার দিন দুপুরবেলাও বৌদির সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল আশরাফুল। সেটা শুনে ফেলে জুলেখা। ও প্রতিবাদ করতেই আশরাফুল এবং তার আত্মীয়রা মিলে জুলেখার মুখে শৌচাগার পরিষ্কার করার জন্য রাখা নাইট্রিক অ্যাসিড ঢেলে দেয়।’’
অ্যাসিড হামলার পর বধূর তীব্র চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। জুলেখাকে উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসা চলার পর গত শুক্রবার ছুটি নিয়ে বাপের বাড়িও ফেরে জুলেখা। কিন্তু ২ দিন সুস্থ থাকার পর সোমবার রাত ৮টা নাগাদ আবার অসুস্থ বোধ করেন জুলেখা। তৎক্ষণাৎ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।
মৃতার বৌদি মনজিরা বিবির অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই বৌদির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল নন্দাই। বৌদির ঘরেই ওঁদের একান্ত মুহূর্তে একাধিক বার দেখেছে আমার ননদ। এ নিয়ে বার বার বলেও আশরাফুল শুধরোয়নি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে আমাদের খবর দেয় যে, জুলেখা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্ত এটা আত্মহত্যা নয়। আমাদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। জামাইয়ের কঠোর শাস্তি হোক।’’
যদিও ওই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আশরাফুলের পরিবারের লোকজন। অভিযুক্তের দাদা ফারুক খলিফা বলেন, ‘‘ওদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হত। ভাইয়ের বৌ খুব রাগী ছিল। রাগের বশে নিজেই শৌচাগারে থাকা অ্যাসিড খেয়ে ফেলে। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে। কেউ ওকে মেরে ফেলেনি।’’