ইলিশ মাছের তেমন দেখা মেলেনি এখনও।
বরফ কুচির উপরে রাখা গোটাকতক ইলিশ। মাছি এসে বসলে তাড়িয়ে দিচ্ছেন পাত্র বাজারের মাছ ব্যবসায়ী তারক হালদার। চকচকে আঁশের টানে এগিয়ে আসছেন দু-একজন খরিদ্দার। কিন্তু দাম শুনে ছিটকে যাচ্ছেন। তেমনই এক ক্রেতা সনাতন মণ্ডল বলছেন, “বাজারে এলে মন ইলিশের খোঁজে ফেরে। কিন্তু যা দাম। কবে যে সাধ্যের মধ্যে তার দেখা পাব কে জানে!”
আষাঢ় ফুরিয়ে গেলেও তেমন ভাবে দেখা নেই ইলিশের। প্রতি বছরের মতো এ বারেও ইলিশের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে মেছো ট্রলার। কিন্তু আশানরূপ ইলিশ জালে পড়েনি। ফলে, অন্য বছর যেখানে এই সময় বাজার নানা মাপের ইলিশে ছেয়ে যেত, এ বছর ছবিটা কার্যত উল্টো।
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোল্ড স্টোরেজে কিছু মাছ রয়েছে। কিন্তু তার দাম বেশ চড়া। ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম ৬০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। ৬০০- ৭০০ গ্রামের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। আর ইলিশের ওজন এক কিলোগ্রাম ছাড়ালে দাম বারশো থেকে দেড় হাজার টাকা। কোনটার দাম আবার আঠারোশো টাকা। অথচ ওই একই ইলিশ গত বছর অনেক কম দামে বিক্রি হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
পাত্র বাজারের ওই ব্যবসায়ী তারক হালদার বলেন, ‘‘অন্য বছর এই সময় ইলিশের ব্যাপক আমদানি হয়। ফলে দাম অনেক কম থাকে। তা ছাড়া অনেকে স্টোরের ইলিশ খেতে চান না। এ বার তাই সব মিলিয়ে ইলিশের বাজার খুব খারাপ।” আর এক মাছ ব্যবসায়ী সোনা হালদার বলছেন, “প্রতি বছর এই সময়টা ইলিশ বেচে কিছু লাভের মুখ দেখি। কিন্তু এ বার মন্দা চলছে।”
কেন এই হাল?
মাছের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রধান কারণ হল বর্ষা। যে বৃষ্টিতে ইলিশ সমুদ্র ছেড়ে নদীতে ঢুকে পড়ে সেই বৃষ্টি এখনও সে ভাবে হয়নি। ফলে জালে ইলিশ খুবই কম পড়ছে। মৎস দফতরের আধিকারিকেরাও সেই কথা জানাচ্ছেন। তাঁরা জানান, ইলিশের জন্য প্রয়োজন ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর পুবালি হাওয়া। এখনও পর্যন্ত যার দেখা নেই। আর সেই কারণেই দেখা নেই রুপোলি ফসলের। নদিয়া জেলার মৎস্য আধিকারিক রামকৃষ্ণ সর্দার বলছেন, “ইলিশের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় মিষ্টি জলে ইলিশ ঢুকতে পারছে না।” তিনি বলেন, “তা ছাড়া আবহাওয়া খারাপ থাকায় মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যেতে পারছিলেন না ইলিশের সন্ধানে। এটাও একটা বড় কারণ।”