বাজারেও রুপোলি শস্যেরর ভিড়।
পদ্মা-গঙ্গা দুই ধারাতেই রুপোলি শস্যের বান ডেকেছে।
ইলিশের ভরা মরসুমে, বিএসএফ-বিজিবি’র দ্বন্দ্বের জেরে হপ্তাভর পদ্মায় নামাই থমকে গিয়েছিল জলঙ্গি-ডোমকল সীমান্তের ধীবরদের। শুক্রবার সেই নিষেধাজ্ঞা উঠতেই নদী তাঁদের বিমুখ করেনি। দিনভর ইলিশ ধরে বিকেল ফুরনোর আগেই মাছ বোঝাই নৌকা ভিড়তে শুরু করেছিল ঘাটে। সেই হাসি শনিবারও ধরে রেখেছেন মৎস্যজীবীরা। এ দিনও পদ্মা থেকে নৌকা-বোঝাই ইলিশ নিয়েই ঘরে ফিরেছেন তাঁরা। ফরাক্কার ধুলিয়ান-সুতি এলাকায় একের পর এক গ্রাম গঙ্গা ভাঙনে মুছে গেলেও নদী ইলিশ ফিরিয়ে দিতে দিতে কার্পণ্য করেনি! নদীতে নাও ভাসালেই সেখানে মিলছে দেদার ইলিশ। ধলিয়ান-সুতির বাজারে পা রাখলেই এখন ইলিশে অরুচি ধরার জোগাড়।
জলরেখা লঙ্ঘন করার দায়েই সপ্তাহখানেক আগে তিন ধীবরকে আটক করেছিল বিজিবি। তাঁদের ছাড়িয়ে আনতে গিয়েই বাদানুবাদের জেরে গুলি চালায় বিজিবি। মারা যান এক বিএসএফ জওয়ান। সপ্তাহ ঘুরে গেলেও ঘরে ফেরেননি আটক প্রণব মণ্ডল। শিরচর-সহ আশপাশের ধীবর সম্প্রদায় অবশ্য দেদার ইলিশ ফিরে পেয়ে সেই দুঃখ কিছুটা ভুলেছেন। কালীপুজোর বাজারে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার ইলিশ-দর এ দিন এক লাফে নেমে এসেছে হাজার বারোশোয়। শনিবার জলঙ্গির বাজারে ছোট্ট একটা ব্যাগে গোটা কয়েক ইলিশ নিয়ে বাবর আলি রওনা দিয়েছিলেন বাড়ির পথে। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘ছোট হোক, তবুও পদ্মার টাটকা ইলিশ তো।’’
দুর্গাপুজোর সময় সীমান্তপথে ৫০০ টন ইলিশের জোগান দিয়েছিল বাংলাদেশ। কালীপুজোর মুখে সেই ইলিশ যেন নদী পথে গঙ্গায় ফিরল। পদ্মা বেয়ে উজানে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসছে ফরাক্কার গঙ্গায়। তাই ফরাক্কা, অর্জুনপুর, নিমতিতার গঙ্গায় মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশের ঝাঁক। দামেও সস্তা। ফরাক্কার অর্জুনপুরের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলছেন, “বাড়িতে এখন ইলিশের পদ। ২০০ টাকা কেজি দরে মিলছে ঘাটে দাঁড়ালেই।’’
মুর্শিদাবাদের সহকারী মৎস্য আধিকারিক অমলেন্দু বর্মন অবশ্য সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘‘প্রতি বছরই অক্টোবরের প্রথম পনেরোটা দিন বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। ওই সময় ডিম ছাড়ে ইলিশ। পদ্মার ইলিশ এই সময়ে গঙ্গায় এসে পড়ে। মনে রাখবেন, এ মাসের শেষে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেই এই ঢল আর থাকবে না।”