বাস ধরার জন্য পরীক্ষার্থীদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় নেই পর্যাপ্ত বাস। তার জেরে ভুগতে হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে বাসে জায়াগা হয়নি অনেকের। ফলে বেশি ভাড়া গুনে ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছেন অনেক অভিভাবক। অনেকের সেই সামর্থ্যে কুলোয়নি। তাই সাইকেলে চেপে এসেছেন।
তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক সভা হলে বাসের অভাব হয় না। কিন্তু এত দূরে পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে জেনেও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। সারাক্ষণ মনে এই ভয় কাজ করছে ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছেলেমেয়ে নিয়ে পৌঁছতে পারবের কিনা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাটের মিলন বাগান শিক্ষা নিকেতনে পরীক্ষার আসন পড়েছে হবিবপুর হাইস্কুল, নপাড়া হাইস্কুল-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের কয়েকশো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। ওই স্কুল থেকে তারাপুর, দুর্গাপুর, নপাড়ার দূরত্ব প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় সারাদিনে মোটে তিনটি বাস চলে। প্রথম বাসটি ছাড়ে সকাল ৮টায়। এ দিকে, পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হয় সকাল ৯টার মধ্যে। ফলে, ওই বাসে উপচে পড়ে ভিড়। অনেকে উঠতে না পেরে কেউ টোটো, কেউ মোটরভ্যানে চেপে পরীক্ষার্থীকে নিয়ে কেন্দ্রে এসেছেন। সাইকেল চালিয়েও কাউকে কাউকে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে দেখা গিয়েছে।
তারাপুর থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছে ঈশিতা বিশ্বাস আর সুপ্রিয়া মণ্ডল। পরীক্ষা শেষে অন্য অনেকের সঙ্গে তারাও দাঁড়িয়ে ছিল বাসের জন্য। ঈশিতা জানায়, সকালে বাস পেলেও প্রচুর ভিড় থাকায় আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পরের দিনগুলিতে বাস না পেলে কী হবে সেই চিন্তা মাখায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
কাশীনাথ পুর থেকে এসেছে ফারুখ, শামীম, সিদ্ধার্থ, দেবকুমার। তারা জানায়, পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাদের বাড়ি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। সকালে বাসে জায়গা হয়নি। ফলে, পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বাস না পেলে টোটোয় আসতে হয়। কিন্তু ভাড়া অনেক। সেই ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। ফলে, আগামী দিনে হয়তো সাইকেলে নিয়েই আসতে হবে তাদের।
মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে দিতে এসেছেন সমর বিশ্বাস। তিনি জানান, সকালে বাস না পেয়ে টোটোয় এসেছেন। দু’জনের ৪০ টাকা ভাড়া। যেতেও তা-ই লাগবে। তিনি বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চলে। ভাবছি কাল আরও তাড়াতাড়ি বাস ধরতে বাড়ি থেকে বার হব। তাঁর অনুরোধ, ‘‘পরীক্ষার এই ক’দিন যদি একটু বেশি বাস চলে তো সবার উপকার হয়। সময় মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে কারও আর চিন্তা করতে হবে না।’’ নাম প্রকাশে এক অভিভাবক জানান, ‘‘রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যাওয়ার জন্য তো প্রচুর বাস মেলে। প্রশাসনও অনুমতি দেয়। পরীক্ষার কথা ভেবে কি বাড়তি দু’চারটে বাসের ব্যবস্থা করতে পারে না প্রশাসন?’’
রানাঘাট ১ ব্লকের বিডিও অতনু মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাকে কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। তবে খবর যখন পেয়েছি, পদক্ষেপ করা হবে।’’