ফাইল চিত্র
প্রায় তিন মাস হতে চলল, প্রতি দিনের আনাজ বাজারে আলুর দাম ‘নট নড়ন চড়ন’। বৃহস্পতিবার নদিয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণে খোলা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ওই দরেই। করিমপুর বাজারে এ দিন জ্যোতি আলু ৩৪ টাকা আর চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা কেজি দরে। নবদ্বীপে জ্যোতি ৩০ টাকা এবং চন্দ্রমুখী ৩৫ টাকা। মদনপুরের বাজারে জ্যোতি ৩২-৩৩ টাকা আর চন্দ্রমুখী ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
অথচ এই সময়ে বাজারে আলুর এই দাম শুধু চড়া নয়, অস্বাভাবিকও বটে। এমন বিপুল চড়া দামে এত দিন ধরে আলু কেনাবেচা আগে কখনও করছেন বলে মনে করতে পারছেন না ছোট-বড় কোনও ব্যবসায়ীই। কিন্তু আলুর দরে কেমন এমন বেচাল? চাষি থেকে পাইকার, বিশেষজ্ঞ থেকে খুচরো ডালাওয়ালা আঙুল তুলছেন প্রধানত কয়েকটি বিষয়ের দিকে যার মধ্যে অন্যতম লকডাউনের পরে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া আলুর ব্যবহার।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আলু বছরে এক বারই চাষ হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ওঠা আলুর উপরেই সারা বছর ভরসা। কিছু নতুন আলু অবশ্য জানুয়ারি নাগাদ বাজারে চলে আসে। কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষের ব্যাখ্যা, “অন্য বার আলুর চাহিদার একটা সাধারণ হিসাব থাকে। সেই মতো স্থানীয় এবং ভিন্ রাজ্যের বাজারে কেনাবেচা হয়। কিন্তু এ বারে লকডাউন সেই হিসাব ওলটপালট করে দিয়েছে।” তাঁর মতে, এ বছর করোনা আবহে আলু ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। টানা লকডাউন থেকে হালের সাপ্তাহিক লকডাউন। সাধারণ মানুষ সবার আগে কিনে রাখছে পর্যাপ্ত আলু। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বিরাট পরিমাণ আলু মিড-ডে মিল বা ত্রাণের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। পার্থবাবু বলেন, “নিজেদের খাওয়া বা খয়রাতি, আলুর কোনও বিকল্প নেই। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এই চাহিদাই এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ।”
কৃষি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে একমত আলুর পাইকারি বা খুচরো ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা জানান, করোনা কালে ধনী-গরিব নির্বিশেষে অন্যতম ভরসা আলুই। লকডাউন হোক বা এলাকা কনটেনমেন্ট জোন হোক। বাজার বন্ধেও পরোয়া নেই বাড়িতে চাল আর আলু থাকলে। এর উপরে আনাজের দাম চড়ে যাওয়ায় আলুর কদর আরও বেড়েছে।
নদিয়ায় এমনিতে আলু চাষ কমই হয়। এ বার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আলু চাষিদের কথায়, প্রবল বৃষ্টির জন্য অন্য আনাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আলুর ওপর চাপ খুব বেশি। যদিও নদিয়া জেলায় আলুর জোগান আসে প্রধানত পার্শ্ববর্তী বর্ধমান এবং হুগলি থেকে। আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী বিষ্ণুপদ কুণ্ডু বলেন, “ভাল আলু সবটাই আসে হুগলির চাঁপাডাঙা, দশঘরা বা পাণ্ডুয়া থেকে। তুলনায় কমদামি আলুর জোগান দেয় বর্ধমানের কালনা, সমুদ্রগড়, নিমতলা প্রভৃতি অঞ্চল। পাইকারি বাজারে যেমন দর তেমন দাম খুচরো বাজারে। প্রচুর চাহিদা অথচ বাজারে আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। এই অবস্থায় দাম চড়ে থাকবে।” বড় পাইকারদের একাংশের মতে, আলুর মজুত কমে আসছে, চাষিরা তাঁদের মজুত আলু ছাড়তে চাইছেন না, তাই এই মূল্য বৃদ্ধি। তবে গত দু’তিন দিন ধরে পাইকারি বাজারে আলুর দাম কমছে। ফলে খুচরো দামে এক টাকা করে কমেছে।
হুগলির চাঁপাডাঙার পাইকার বংশী মান্না বলেন, “আরও দামের আশায় তাঁরা নিজেদের মজুত আলু চট করে ছাড়তে চাইছেন না। চাহিদা বেশি অথচ পর্যাপ্ত জোগান নেই, দাম তো বাড়বেই।” তবে কয়েক দিন ধরে কিছু বাজারে আলুর দাম সামান্য হলেও কমেছে। পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি গড়ে পঞ্চাশ টাকা দাম কমেছে। খুচরো বাজারে দাম কমেছে কেজি প্রতি এক টাকা। বুধবার চাঁপাডাঙার পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ১১২০-১১৩০ টাকা দরে। চন্দ্রমুখী বিক্রি হয়েছে ১২০০-১২২০ টাকা দরে। পাইকারেরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের বাজারে দর আরও কিছুটা নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে নতুন আলু ওঠার আগে দাম কমার আশা কার্যত নেই বললেই চলে।