—প্রতীকী চিত্র।
পুজোর আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি প্রতিরোধে আরও সতর্ক হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, সামনের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গির বাড়বড়ন্তের সময়। বর্তমানে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী। তবে পুজোর মরসুমে মানুষের অসেচতনতার কারণে যে কোনও মুহূর্তে আবার ডেঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সে দিকে তাকিয়েই ডেঙ্গি প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক। প্রতিটি এলাকায় সমীক্ষা ও মশার লার্ভা মারার স্প্রে ছড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, রবিবার ডেঙ্গি প্রতিরোধে রাজ্য প্রশাসনের স্বরাষ্ট্র সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা ও স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম সব জেলা শাসক ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। সেই বৈঠকে জেলার কোথায় প্রথম ডেঙ্গি ব্যাপক হারে ছড়িয়েছিল, সেখানকার বর্তমান অবস্থা কেমন, নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্ত কোথাও হচ্ছে কি না— ইত্যাদি বিষয়ও ওঠে। কোনও কোনও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে ব্লকে নতুন করে ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশও এসেছে।
পুজোর আগে স্বাস্থ্য দফতর, বিশেষ করে সতর্ক হচ্ছেন বিভিন্ন বাজার-ঘাট, চায়ের দোকান এলাকা নিয়ে। পুজোর আগে এই সমস্ত এলাকায় মানুষের ভিড় জমবে। জলের বোতল বা চায়ের ভাঁড় মানুষ যত্রতত্র ফেলবে। সেই সকল পাত্রে জল জমে ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার লার্ভা জমার আশঙ্কাও বাড়বে। এই সকল এলাকা পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট জোর দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুজোর আগে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে পুজোর আনন্দই তো মাটি হয়ে যাবে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই বছরে রবিবার পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৮৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন নতুন-পুরনো আক্রান্ত নিয়ে প্রায় ২৫০ জন। তবে আগের চেয়ে ডেঙ্গি পরীক্ষা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগের বিভিন্ন হাসপাতালের সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষ্ণনগর, কল্যাণী, হরিণঘাটা, গয়েশপুর, চাকদহ, রানাঘাট, নবদ্বীপ পুরসভায় ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে মাসখানেক ধরে। আগে প্রতি দিন প্রায় ৭০০ জনের মতো পরীক্ষা হত। প্রতি দিন গড়ে আক্রান্ত হত ৮০ জন। সেখানে এখন প্রতি দিন এই ১৪টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৯০০ জনের ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে। তাতে প্রতি দিন আক্রান্ত হচ্ছে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন। চলতি বছরে বেশ কয়েক জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে জেলায়।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর মতো এলাকায় এক সময়ে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ হলেও বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে জেলার চাকদহ, হরিণঘাটা মতো এলাকা নিয়ে এখনও চিন্তা রয়েছে। হরিণঘাটা ব্লক প্রশাসনের দাবি, তাদেরও ডেঙ্গি পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সোমবার হরিণঘাটায় কেউ ডেঙ্গি আক্রান্তও হয়নি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা জেলায় আগের চেয়ে কমে গিয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’