প্রতীকী ছবি।
দিনটা ছিল শনিবার।
ওঁরা শেষ বার ব্যান্ডেল লোকাল থেকে নেমে পড়েছিলেন যে যার নিজের স্টেশনে।
২১ মার্চ, ২০২০।
করোনার গুঁতোয় পরের দিন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেলপথের কয়েক হাজার হকার যাঁরা ট্রেনে ফেরি করে অথবা প্ল্যাটফর্মে পসরা সাজিয়ে সংসার চালাতেন, এক লহমায় বেকার হয়ে যান।
এর পরে প্রায় আট মাস ওঁদের কেটেছে অন্তহীন অপেক্ষায়। জুনে শেষ হয়েছে লকডাউন পর্ব। তার পর ‘আনলক’ এক, দুই, তিন... করে এ বার ষষ্ঠ দফায় এসে ফের চালু হতে চলেছে শহরতলির ট্রেন। সব ঠিকঠাক চললে আগামী ১১ নভেম্বর, বুধবার থেকে ফের লোকাল ট্রেনের চাকা গড়াবে। সাজ-সাজ রব পড়েছে সর্বত্র।
কিন্তু ধন্দ যাচ্ছে না ওঁদের। ২৩৪ দিনের মাথায় চালু হওয়া লোকাল ট্রেনে ওঁদের কাজ করার সুযোগ আদৌ কি মিলবে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে স্টেশনে স্টেশনে। আপাতত সব ট্রেন চলবে না। যাত্রীদের ওঠার ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ থাকবে। এই অবস্থায় রেল হকারদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্নে রেল কঠোর অবস্থান নিতে পারে। ফলে ট্রেন চললেও তাঁদের জীবিকার কতটা সুরাহা হবে সেই আশঙ্কা থেকেই যাছে। কিন্তু ট্রেন চালু হবে অথচ তাঁরা রোজগারের সুযোগ পাবেন না, ওটাও মানতে রাজি নন রেল হকারেরা। তাঁদের দাবি, প্রথম দিন থেকেই তাঁরা ট্রেনে উঠবেন।
এমনিতে পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায় সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশ মানুষ রেলে হকারি করেন। এর মধ্যে কাটোয়া এবং নবদ্বীপ স্টেশন থেকে এক হাজার জন করে ফেরি করতেন। এ ছাড়া কালনা ও জিরাট থেকে পাঁচশো জন করে, গুপ্তিপাড়া, ত্রিবেণী, সোমরাবাজার প্রভৃতি স্টেশন থেকে শতাধিক মানুষ দৈনিক নানা পণ্য ট্রেনে বা স্টেশনে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কেউ কেউ পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করে আসছেন। তাঁদের দাবি সমর্থন করে ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলই এখন এক সুরে কথা বলছে। গড়ে তুলেছেন সমন্বয় কমিটি।
ব্যান্ডেল কাটোয়া সর্বদলীয় রেল হকার্স সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি সৌমেন অধিকারী বলেন, “ট্রেনে চললে হকারেরাও থাকবেন। গত আট মাস ধরে ওঁরা অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে কাটিয়েছেন। এখন যদি কেউ তাঁদের উপার্জনের পথে বাধা দেয়, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
আইএনটিটিইউসি নেতা অরুণ রায় বলেন, “আমি নিজে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গামছা ফেরি করি। যাঁরা এই পেশায় আমার মতো জীবন কাটিয়ে দিলেন, এই দুঃসময়ে তাঁদের পেটের ভাতে হাত দিলে আমরা সবটুকু দিয়ে রুখব।” সিটু অনুমোদিত সংগঠনের নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ ট্রেনে চিঁড়ে-বাদামভাজা বিক্রি করেন। তাঁর দাবি, “পাঁচ হাজারেরও বেশি হকারের মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। তাতে আরও বিপদে পড়েছেন। একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাড়ির মেয়েরা লোকের বাড়ি কাজ নিয়েছেন। আমরা চাই, সুরক্ষা বিধি মেনে প্রথম দিন থেকেই আমাদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।”
শনিবার রাজ্য ও রেলের বৈঠকে স্থির হওয়া নানা বিধির মধ্যে অবশ্য হকারদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে শেষমেশ কী হবে, এখনও অজানা।