n জল প্রকল্পে হানা প্রশাসনের। বহরমপুরে। ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী
ফের বেআইনি জল প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযানে নামল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর ও বহরমপুর থানার পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে তিনটি বেআইনি পানীয় জলপ্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে জল প্রস্তুত করার যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি দু’টি সংস্থার মালিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত আনন্দ দাস বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা ও কৌশিক সরকারের বাড়ি সুতিরমাঠ এলাকায়। আজ, শুক্রবার তাঁদের বহরমপুরে সিজেএমের এজলাসে হাজির করানো হবে। জল অনুসন্ধান দফতরের কর্তারা জানান, পানীয় জল প্রকল্প তৈরির জন্য একাধিক সংস্থার অনুমোদন লাগে। কিন্তু সে সব ছাড়াই জল প্রকল্প চালানোর অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাজ্য জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের মুর্শিদাবাদের ভারপ্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’টি সংস্থাকে পঞ্চায়েত থেকে জল বিক্রির জন্য ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, জল প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সমস্ত অনুমোদন নিতে হবে। তা সত্ত্বেও কোনও অনুমোদন ছাড়াই ওই প্রকল্প চালাচ্ছিল। অন্য আরও একটি সংস্থা ‘ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ডের’ অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার এই তিনটি সংস্থার জল উৎপাদন বন্ধ করে থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’
ভাকুড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবণী বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মাটির তলার জল তুলে ব্যবসা করার কোনও অনুমতি পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট দফতরের অনুমতি ছাড়া মাটির তলার জল তুলে ব্যবসা করতে নিষেধও করা হয়েছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, আনন্দ দাস বাড়িতে জল প্রকল্প চালাচ্ছিলেন। তিনি পঞ্চায়েতের ‘ট্রেড লাইসেন্স’ ছাড়া আর কিছু দেখাতে পারেননি। আনন্দ জানিয়েছেন, ‘‘অন্যেরা এ ভাবে পঞ্চায়েতের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে জল প্রকল্প চালাচ্ছেন। তাই আমিও চালাচ্ছিলাম। অন্য সংস্থার অনুমোদন লাগবে বলে বিষয়টি আমাদের পঞ্চায়েত জানায়নি।’’
কৌশিক সরকারও বাড়িতে জলের প্রকল্প চালাচ্ছিলেন। রাজ্য জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের ভূতাত্ত্বিক ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অনুমোদন প্রাপ্ত প্রকল্পের জলের আড়ালে এখানে অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প চলছিল। অনুমোদন প্রাপ্ত প্রকল্পের নামের জলের প্যাকেট যেমন পাওয়া গিয়েছে, আবার চালু জল প্রকল্প পাওয়া গিয়েছে।’’
কৌশিকের দাবি, ‘‘আমি অন্য একটি অনুমোদনপ্রাপ্ত পানীয় জল প্রকল্পের জল বিক্রি করি। বাড়িতে যে প্রকল্প তৈরি করেছি সেটি বাড়ির ব্যবহারের জন্য।’’ সুতিরমাঠের বাসিন্দা প্রসূন মিশ্র, আভা রায়দের কথায়, ‘‘মানুষ বিশ্বাস করে এই ধরনের প্রকল্প থেকে জল কিনে খায়। কিন্তু কোনও অনুমোদন ছাড়াই যে এ ভাবে প্রকল্প চলছিল আমরা তো জানতামই না। এ জল তবে কেমন জল!’’
রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের এক কর্তা জানান, তাঁরা মুর্শিদাবাদে ২৩ টি প্যাকেটজাত পানীয় জল প্রস্তুতকারক সংস্থাকে মাটির তলা থেকে জল তোলার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু দফতরের অনুমোদন ছাড়াই জেলা জুড়ে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট পানীয় জল প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এক লিটার, দু’লিটার, ৫ লিটার, ২০ লিটারের জারে জল ভর্তি করে তা বাড়ি বাড়ি যেমন পৌছে দেওয়া হচ্ছে, তেমনি লোকজনও প্রকল্প থেকে জল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘জেলা জুড়ে প্রায় ২ হাজার এরকম পানীয় জল প্রকল্প রয়েছে।’’ রাজ্য জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের মুর্শিদাবাদের ভারপ্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উৎসবের কারণে কিছু দিন অভিযান বন্ধ ছিল। এখন বেআইনি জল প্রকল্পের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলবে।’’