Jangipur

Tant: সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ফিরতে পারে তাঁত শিল্পের অতীত গরিমা

বালুচরী, কোরিয়াল, জাকার্ডে ‘মুর্শিদাবাদ ব্র্যান্ডিং’ এনে দেশের বাজারে মুর্শিদাবাদ সিল্ককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২২ ০৫:৪১
Share:

চলছে তাঁতের কাজ। — ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদ ভেঙে আরও দুই নতুন জেলা তৈরির ঘোষণায় আশার আলো দেখছে জঙ্গিপুরের বিড়ি, প্লাস্টিক এবং তাঁত শিল্প। নতুন জেলা তৈরির ঘোষণা মির্জাপুরের তাঁত শিল্পীদের কাছেও অক্সিজেন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ধুঁকতে থাকা মির্জাপুরের তাঁত শিল্প কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? এ প্রশ্ন অনেকেরই।

Advertisement

ইতিমধ্যেই মির্জাপুর গ্রামে শুরু হয়েছে তাঁত শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ। বালুচরী, কোরিয়াল, জাকার্ডে ‘মুর্শিদাবাদ ব্র্যান্ডিং’ এনে দেশের বাজারে মুর্শিদাবাদ সিল্ককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে সরকার প্রতিযোগিতার বাজারে নিয়ে যেতে চায় মুর্শিদাবাদের সিল্ককে। তাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়েছে মির্জাপুরেই।

জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি ঝর্না দাসের বাড়ি মির্জাপুরে। চার দশক ধরে তাঁত শিল্পের রমরমা তিনি যেমন দেখেছেন, তেমন এখন দেখছেন দুরবস্থা। তিনি বলেন, “বর্ধিষ্ণু গ্রাম মির্জাপুরে কয়েক হাজার পরিবারের বাস। এঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই তাঁতি। এক সময় এখানকার প্রধান জীবিকাই ছিল তাঁত শিল্প। প্রায় ছ’শো তাঁতযন্ত্র ছিল গ্রামে। এখন তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূলত গরদ, জাকার্ড, জামদানি, বালুচরী শাড়ি তৈরি হয় এখানে। মির্জাপুরে উন্নত মানের গরদ সিল্ক তৈরি হয়। কিন্তু এ নিয়ে প্রচার প্রায় নেই বললেই চলে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ব্যবসা বাড়াতে এখন প্রচারও জরুরি। প্রযুক্তির যুগে অনলাইন শপিং বাড়ছে। অথচ মির্জাপুর পড়ে আছে সেই তিমিরেই। তাই দক্ষ কারিগর থেকেও মির্জাপুরে তাঁতের প্রসার ঘটেনি। বরং অনেকে তাঁতের কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়।”

Advertisement

তাঁতিদের সাহায্যের জন্য এক সময় এই গ্রামে গড়ে উঠেছিল সাতটি সমবায় সমিতি। এখন তার বেশির ভাগই বন্ধ। ফলে তাঁত শিল্পীদের এখন প্রধান ভরসা মহাজন। দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর অর্ডার নিয়ে শাড়ি তৈরির ব্যস্ততা। কিন্তু এ বার সেই ব্যস্ততা কোথায়? এক সময় তাঁত যন্ত্র ছিল, কিন্তু পরে তা বিক্রি করে দিয়েছেন সম্রাট বাঘিরা, আমির বাঘিরারা। তাঁরা এখন উমরপুরে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন। সম্রাটের কথায়, ‘‘তাঁত চালিয়ে আর সংসার টানা যাচ্ছিল না। তাই প্লাস্টিক কারখানায় কাজে লেগেছি। মজুরিটা তো নিয়মিত পাচ্ছি। না খেয়ে থাকতে হবে না।”খোকন দাস ও তাঁর ছেলে রিটনের দু’টি তাঁত যন্ত্র আছে বাড়িতে। কিন্তু সেগুলি বন্ধ। খোকন এলাকাতেই ঘুরে কাজ করেন। রিটন প্লাস্টিক কারখানায় কাজে লেগেছেন। খোকনের কথায়, ‘‘তাঁত চালিয়ে সংসার চলে না।” একটি সমবায় সমিতির সভাপতি বলেন, “আগে তিন ভাই তাঁত চালাতাম। এখন দু’জন। ভরসা পাইনি বলে ছেলেকে এই পেশা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এখন আর তাঁত চালিয়ে পোষাচ্ছে না। যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সংস্থান নেই, তারাই তাঁত নিয়ে পড়ে আছে, আর টিকে আছে জাকার্ডের মতো শাড়ি তৈরিতে দক্ষ হাতে-গোনা কিছু তাঁত শিল্পী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তাঁত শিল্পের সঙ্কট ঘুচবে না।’’ ঝর্না বলেন, “রাজ্য সরকারের ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পে এই মুর্শিদাবাদ ব্র্যান্ডটাই তুলে ধরতে চাইছি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement