artist

Artist: শিল্পীর স্বপ্নে বিভোর গোরাচাঁদ

শিবনিবাস শ্রীশ্রী মহনানন্দ হাইস্কুলের ছাত্র গোরাচাঁদের বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি গ্রামে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

পুজোর আগে গ্রামের মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন স্থানীয় এক বয়ষ্ক শিল্পী। কাঠামো বাঁধা শুরু হওয়ার সময় থেকেই তাকে ঘরে আটকে রাখতে পারত না কেউ। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে গিয়ে মন্দিরের সামনে চুপটি করে বসে থাকত। একমনে দেখত প্রতিমা তৈরির প্রতিটা পর্যায়। আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করে চলত। শিল্পী কখনও হাসি মুখে তার প্রশ্নের উত্তর দিতেন আবার কখনও বিরক্ত হয়ে ধমক দিতেন। কিন্তু তাতে শিশুটির প্রশ্ন করা থেমে থাকত না। সেই শিশু আজ ষোলো বছরের কিশোর। আজ সে এলাকার অন্যতম পরিচিত মৃৎশিল্পী। গোটা লকডাউনে কর্মহীন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল সেই। প্রতিমা গড়েই কোনও মতে বাঁচিয়ে রেখেছিল সংসারটাকে। জোগাড় করে নিয়ে ছিল নিজের পড়ার খরচটাও। একমনে প্রতিমার চোখ আঁকতে আঁকতে এক মুহূর্ত না ভেবে কিশোর গোরাচাঁদ অধিকারী বলছে, “আমি শিল্পী হতে চাই। শুধুই শিল্পী।”

শিবনিবাস শ্রীশ্রী মহনানন্দ হাইস্কুলের ছাত্র গোরাচাঁদের বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি গ্রামে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে চুর্ণী নদী। সেই ধারেই বাড়ি গোরাচাঁদের। ছোটবেলায় দুর্গা প্রতিমা তৈরি হতে দেখে সেও নদীর ধার থেকে মাটি তুলে এনে নিজের মতো করে প্রতিমা তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির দলা একটু একটু করে সরস্বতী প্রতিমার চেহারা নিতে থাকে। দোকান থেকে বাতাসা, নকুলদানা কিনে এনে বাড়িতে একাই নিজের মতো করে পুজো করা শুরু করে গোরাচাঁদ। বয়স যত বেড়েছে সেই প্রতিমা ততই নিখুঁত হয়েছে। গোরাচাঁদ বলে, “আমাকে কেউ হাতে ধরে শিখিয়ে দেননি। মাটি ঘাঁটতে ঘাঁটতে কবেই যেন নিজেই শিখে নিয়েছি।”

Advertisement

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই প্রথম সে প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করে। প্রথমবার ১০টা প্রতিমা তৈরি করেছিল। প্রতিটার দাম ছিল তিনশো টাকা করে। আস্তে আস্তে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আসতে থাকে বায়না। গত বছর সে ৩০টি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছিল। বিক্রি করেছিল পাঁচ থেকে ছ’শো টাকায়। এ বার চাহিদা আরও বেশি। এ বারও ৩০টি প্রতিমা তৈরি করেছে গোরাচাঁদ। তার মধ্যে দুটো আছে বড় প্রতিমা। দাম আড়াই হাজার টাকা করে। বাকিগুলোর দাম সাতশো থেকে আটশো টাকা। গোরাচাঁদ বলছে, “আমি একজন শিল্পী হতে চাই। পুরোপুরি শিল্পী। পড়াশুনোর থেকে প্রতিমা তৈরি করতেই বেশি ভাল লাগে।”

গত বছর সরস্বতী প্রতিমা ছাড়াও একাধিক জগদ্ধাত্রী ও কালী প্রতিমা তৈরি করছে সে। আশে পাশের গ্রামের ক্লাব থেকেও তার কাছে বায়না আসতে শুরু করেছে। গোরাচাঁদের বাবা গৌতম অধিকারীর ছোটখাট কাঠের ব্যবসা। করোনায় খুবই সঙ্কটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল গোটা পরিবার। সেই সময় গৌরাচাঁদের প্রতিমা বিক্রির টাকাই কোনও মতে বাঁচিয়ে রেখেছিল পরিবারটিকে। এই টাকাতেই চলে তার পড়াশুনোর খরচও। গোরাচাঁদের মা কাকলী অধিকারী বলছেন, “ছেলে প্রতিমা বিক্রির একটা টাকাও নিজের জন্য খরচ করে না। হাতে তুলে দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement