Jagadhatri Puja 2023

জগদ্ধাত্রীকে সোনার টিপ, বছরে ব্যবসা কয়েক লক্ষের

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে কৃষ্ণনগর শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই পুজোর আঙ্গিকে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১৮
Share:

সোনার টিপ আর গয়না পরা চাষাপাড়ার প্রতিমা বুড়িমা। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

দেবী জগদ্ধাত্রীর কাছে মানতে সোনার টিপ দেওয়া কৃষ্ণনগরের ভক্তদের দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। শুধু কৃষ্ণনগর শহরই নয়, দূর-দূরান্তের মানুষ পুজোর দিনে জগদ্ধাত্রীকে সোনার টিপ মানতে উপহার দেন। ফলে, প্রতি বছর কৃষ্ণনগরে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার টিপ বিক্রি হয়।

Advertisement

শহরের ছোট-বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বছরের এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ধনতেরাস আর বিয়ের মরসুম ছাড়া জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বেশ ভাল রকমের সোনা বিক্রি হয় দেবীর সোনা টিপের দৌলতে। জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ বারোয়ারি এই সোনার টিপ গলিয়েই জগদ্ধাত্রীর গায়ের গয়না তৈরি করে থাকে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোনার দাম বাড়তে থাকায় আগের মতো তেমন লাভের মুখ দেখতে পান না স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা, এমনটাই তাঁদে দাবি। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের হাতেও কমছে সঞ্চয়ের টাকা। যে কারণে মানতের ওই সোনার টিপের বিক্রি আগের চেয়ে কিছুটা হলেও কমছে বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে কৃষ্ণনগর শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই পুজোর আঙ্গিকে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। অনেক প্রথা, অনেক রেওয়াজ নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে এই পুজোর সঙ্গে। সাং যেমন কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত রয়েছে, তেমনই দেবীকে সোনার টিপ মানত করার বিষয়টিও অতি প্রাচীন রেওয়াজ। ঠিক কবে থেকে, কী ভাবে এই প্রথাম প্রচলন, সে আর এখন স্পষ্ট নয় কৃষ্ণনাগরিকদের কাছেও। শোনা যায়, বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্য চলে আসছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ছোট-বড় মিলিয়ে কৃষ্ণনগরে প্রায় শ’দুয়েক জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। প্রায় প্রতিটি বারোয়ারি পুজো প্রতিমার কাছেই ভক্তদের মানতের সোনার টিপ জমা পড়ে। তবে যে বারোয়ারি বা প্রতিমার জনপ্রিয়তা যত বেশি, সেখানে তত বেশি মানতের টিপ জমা পড়ে বলে দাবি।

Advertisement

কৃষ্ণনগর শহরের সব চেয়ে জনপ্রিয় প্রতিমা হল চাষাপাড়া বারোয়ারির বুড়িমা। এই জগদ্ধাত্রী প্রতিমা প্রতি বছর প্রায় সাড়ে আট কেজি সোনার গয়না পরে থাকেন। তাঁর মাথায় প্রায় ৩০ ভরি ওজনের সোনার মুকুট, প্রায় ৫০ ভরি ওজনের টায়রা ও টিকলি। হাতে থাকে প্রায় ২০টির মতো বালা। যার ওজন প্রায় দু’কেজি। এ ছাড়াও গলায় থাকে ১২টি সোনার সীতাহার। যার ওজন প্রায় দু’কেজি। প্রায় ২০ ভরি ওজনের সোনার চিক থাকে প্রতিমার অঙ্গে। এ ছাড়াও ১৮ ফুট উচ্চতার এই দেবীর আরও একাধিক গহনা রয়েছে। এসব ছাড়াও দেবীর কপালে থাকে অগুনতি সোনার টিপ। ওই সমস্ত গয়নাই তৈরি হয়েছে ভক্তদের মানতের সোনার টিপ গলিয়ে। চাষাপাড়া বারোয়ারির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “প্রতি বছর মানত হিসাবে প্রায় ৪০ ভরি করে সোনার টিপ জমা পড়ে। সেই টিপ গলিয়েই দেবীর গয়না তৈরি করা হয়।”

ওই রেওয়াজের জেরে ব্যবসায় গতি লাগায় খুশি থাকেন শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও। প্রতি বছর কৃষ্ণনগর শহরে ওই প্রচলিত রেওয়াজের দরুণ প্রায় ২০ থেকে ২৪ লক্ষ টাকার সোনার টিপ বিক্রি হয়ে থাকে বলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। ফলে, তাঁরাও চান কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো আরও ছবিয়ে পড়ুক, আরও জনপ্রিয়তা বাড়ুক। যাতে বাইরের এলাকা থেকেও মানুষ এসে দেবীকে সোনার টিপ মানতে উপহার দেন।

দক্ষিণ কৃষ্ণনগর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতির সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের মূল শহরে প্রায় তিনশোটির মতো সোনার দোকান আছে। প্রায় সব দোকান থেকেই সোনার টিপ বিক্রি হয়। তবে সোনার দাম যে হারে বাড়ছে, সেই হারে তো আর দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে, আমাদের লাভ প্রায় থাকছে না বললেই চলে।” জানা গেল, সোনার দোকানের পাশাপাশি শহরের বড় শো-রুমেও দেবীর মানতের সোনার টিপের চাহিদা রয়েছে। এমনই একটি শো-রুমের ম্যানাজার সোমনাথ সান্যাল বলেন, “আমরাও সোনার টিপ বিক্রি করি। কারণ এর চাহিদা আছে। আমাদের এখানে একশো টাকা থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দামের টিপ পাওয়া যায়। মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী টিপ কেনেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement