ঝুপ করে নেমে আসে শীতের সন্ধ্যা।
বাড়ি থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়, ‘তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস। পথঘাট বড় ভাল নয়।’ মাঝে মধ্যেই বেজে ওঠে মুঠোর ফোন, ‘কী রে, কত দূর?’ সঙ্গীও তাড়া দেন, ‘তাড়াতাড়ি পা চালা।’ কিন্তু এ সব করেও সবসময় শেষরক্ষা হয় না। আঁধার পথে পদে পদে ওত পেতে থাকে বিপদ। গত বছর কালীগঞ্জ-দেবগ্রাম রাজ্য সড়কে স্কুটিতে দাদার সঙ্গে বা়ড়ি ফিরছিলেন দুই বোন। পিছু নিয়েছিল একটি মোটরবাইক। কখনও এগিয়ে, কখনও কাছাকাছি, কখনও আবার পিছন থেকে দুই বোনের মুখে তীব্র আলো ফেলে নাগাড়ে বিরক্ত করছিল তিন যুবক। তাদের সেই দৌরাত্ম্য এড়াতে স্কুটির গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কালীগঞ্জের শ্যাওড়াতলার বাসিন্দা গোলাম মোর্তাজা।
বিপদ বুঝে দুই বোন সিঁটিয়ে বসে ছিলেন স্কুটির পিছনের সিটে। তা দেখে আরও মজা পেয়ে যায় ওই যুবকেরা। বাইক ছুটিয়ে তারা সটান ধাক্কা মারে স্কুটিতে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে মারা যান গোলাম। পুলিশ তিন যুবককে গ্রেফতারও করে। সেই ঘটনার ক’দিন পরেই ভরসন্ধ্যায় ফের অঘটন শান্তিপুরে। কম্পিউটর ক্লাস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় কলেজের এক ছাত্রী। মোটরবাইকে তাঁর পিছু নেয় দু’জন। বিপদ বুঝে সাইকেলে গতি বাড়ান তিনি। কিন্তু পড়ে যান। টাল সামলাতে না পেরে মোটরবাইক নিয়ে পড়ে যায় দুই যুবকও। ছাত্রীর চিৎকারে ছুটে আসেন লোকজন। তাঁরাই দুই যুবককে আটকে রাখে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বেলডাঙা পুরসভা হওয়ার সুবাদে শহরে আলো আগের থেকে অনেক বেড়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা? সে বিষয়ে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, যেখানে দোকানপাট রয়েছে সেখানে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু সমস্ত অলিগলিতে আলো থাকলেও দোকানপাট নেই। ফলে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পথে বহু মহিলাকেই হেনস্থা হতে হয় বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি বেলডাঙাতেই সন্ধ্যার পরে টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক তরুণী। সামনে থেকে আচমকাই উড়ে এসে পথ আটকায় এক মোটরবাইক। অপরিচিত ওই যুবকেরা তরুণীকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করে। ছিনিয়ে নেয় ব্যাগে থাকা মোবাইলটিও। বেলডাঙা স্টেশন রোডেও সন্ধ্যার পরে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা হয় বলেও অভিযোগ।
দু’একটি ঘটনা ছাড়া সবসময় থানা-পুলিশও হয় না। ভুক্তভোগী এক তরুণী বলছেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে ফেরার জন্য এমনিতেই বাড়িতে সমস্যা হয়। এ সব কথা জানতে পারলে তো আর চাকরিটাই করতে দেবে না।’’ আর এক অভিভাবকের যুক্তি, ‘‘সব চেনেও ভয়ে চুপ থাকতে হয়। ওই রাস্তা দিয়েই তো কাল মেয়েকে বাড়ি ফিরতে হবে। থানা-পুলিশ করলে যদি ওরা বদলা নিয়ে বসে!’
(চলবে)