Raghunathganj

‘মরে যাব’ ভয় দেখাতে গিয়ে মৃত্যু

রঘুনাথগঞ্জ থানার চড়কা গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধেয় এই ঘটনার পরে শোকে ভেঙে পড়ে গোটা গ্রামই। আনসুরা পাশের গ্রাম খরিবোনা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২২
Share:

আনসুরা খাতুন।

ভাতের থালায় কে কতটা তরকারি পেয়েছে, তাই নিয়ে দুই বোনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। তাতেই অভিমান করে উঠে যায় দিদি আনসুরা খাতুন (১৪)। তার পরে বোনকে ভয় দেখায়, গলায় ওড়নার ফাঁস জড়িয়ে সে আত্মহত্যা করবে। সত্যিই তা করবে বলে ভাবেনি বোন সুলতানা। কিন্তু অনভ্যস্ত হাতে নিজের গলায় জড়ানো সেই ফাঁসেই শেষ পর্যন্ত মারা যায় আনসুরা। দিদির এই কাণ্ডে কথা হারিয়েছে সুলতানা।

Advertisement

রঘুনাথগঞ্জ থানার চড়কা গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধেয় এই ঘটনার পরে শোকে ভেঙে পড়ে গোটা গ্রামই। আনসুরা পাশের গ্রাম খরিবোনা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সুলতানা ওই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া।

কী করে হল এমন কাণ্ড? আনসুরার বাবা রহিম শেখ জানান, সকালে খেতে বসে দুই বোনের মধ্যে খাওয়া নিয়ে নেহাত কথা কাটাকাটি হয়। তিনি বলেন, ‘‘ভাল কিছু রান্না হলেই বোন বলে দিদি বেশি পেয়েছে, দিদি বলে বোন বেশি পেয়েছে। ভাতের সঙ্গে তরকারি কে বেশি পেয়েছে, তা নিয়েই মঙ্গলবার সকালে দুই বোনে কথা কাটাকাটি হয়। আমি তা থামিয়েও দিই। রাগের মাথায় খাওয়া ছেড়ে উঠে যায় বড় মেয়ে আনসুরা। পিঠোপিঠি দুই বোনের মধ্যে এ রকম মাঝে মধ্যেই হয়। আমরা গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ডেকে আনলেই আবার খেতে বসে। কিন্তু এ দিন তাড়া ছিল। ডেকে আনতে যাইনি। তাতেই অভিমানে নিজেকে শেষ করে দিল মেয়েটা’’

Advertisement

পাশেই আনসুরাদের সম্পর্কিত বোন পিঙ্কি খাতুনের বিয়ের লগনের অনুষ্ঠানে। তিন দিন বাদে বিয়ে। তাই সেই নিয়েই সবাই ব্যস্ত ছিলেন। রহিম বলেন, ‘‘আনসুরা কখন ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়, সে ভাবে খেয়ালও করিনি। ভেবেছিল হয়তো আমরা বিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময়ও একবার ডাকব। কিন্তু আমরা অতটা খেয়াল করিনি।” মা মোসলেমা বিবি বলছেন, “বিয়ে বাড়িতেই নজরে পড়ে বড় মেয়ে আসেনি। সুলতানাই দেখে ঘরে ঢুকে দেখে টিনের চালায় বাঁশের কোঁড়ার সঙ্গে চৌকির উপরে ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে মেয়ে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে ছুটে যায় সকলেই। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ।” জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সুলতানা ভয়ে যেন কুঁকড়ে আছে। তার কথা, “দিদি রেগে গিয়ে যে এটা করতে পারে, তা ভাবতেই পারিনি। দিদিই তো ছিল আমার সব সময়ের সাথী।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান বলছেন, “স্কুলে বারোশো ছেলেমেয়ে। পিছিয়ে থাকা এলাকা। বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাই স্কুলে কাউন্সেলিং করা হয়। কিন্তু ওই দুই বোনের সম্পর্কে সে ভাবে কোনও কথা শুনিনি। তাই কখনও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন মনে হয় নি। করলে হয়ত ভাল হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement