প্রতীকী চিত্র।
কোভিড-১৯-এর কারণে পুজো এবার কেমন জমবে সেটা নিয়ে এখনও প্রশ্ন চিহ্নের উপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবাসী। কিন্তু তাতে কী! প্রতিবারের মতোই জীমূতবাহনের পুজোর মাধ্যমে দেবী চণ্ডীর আরাধনা দিয়ে এ বারের পুজো সূচনা করেছেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। ঘোষ পরিবারের ঠাকুর বাড়ির উঠানে ঝড় বৃষ্টির দেবতা জীমূতবাহনের পুজোর মধ্যে দিয়েই এবারের পুজো শুরু।
ঘোষ পরিবারের সদস্যদের দাবি প্রায় ৯০০ বছরেরও বেশি ওই পুজোর বয়স। কান্দি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পার-রসড়া গ্রামে ওই ঘোষ পরিবারের পুজো দেখতে ভিড় করেন এলাকার বাসিন্দারা। এমনিতে অন্য পুজো চার থেকে পাঁচ দিনে সমাপ্ত হলেও ওই ঘোষ পরিবারের পুজো চলে প্রায় এক মাস ধরে। বোধনের দিন থেকেই নিয়মিত পুজো শুরু হয় ওই পরিবারে। জীমূতবাহনের পুজোর মধ্যে দিয়ে পুজো শুরুর পর বোধনের দিন থেকেই দশমী পর্যন্ত নিয়মিত পুজো হয়। তারপর প্রতিমা বিসর্জনের পর আট দিন জলে কাঠামো থাকার পর ওই কাঠামো মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দিনভর পুজোর পর পুজোর সমাপ্ত হয়। অন্য বছর ২৮ দিন ধরে পুজো হলেও এবার আশ্বিন মাস মল মাস হওয়ার কারণে প্রায় ৪৮দিন ধরে পুজো হওয়ার পর পুজো সমাপ্ত হবে বলেও জানায় ওই পরিবারের প্রধান পুরোহিত মানিক চক্রবর্তী।
পারিবারিক সূত্রে জানাযায় উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বাসিন্দা সৌমেশ্বর ঘোষ প্রায় ৯০০বছর আগে ভরতপুর থানার জজান গ্রামে জমিদারি শুরু করে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দু’ছেলে সানন্দ ঘোষ ও সীমন্ত ঘোষ। সানন্দ ঘোষ জজানের পার্শ্ববর্তী এলাকা পার-রসড়াতে বসবাস শুরু করেন। এবং সীমন্ত ঘোষ রসড়াতে বসবাস শুরু করে ছিলেন। যেটা বর্তমানে কান্দি পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড। সেই সময় ওই দু’এলাকায় জঙ্গলে ভরাছিল। জঙ্গল পরিস্কার করে দু’ভাই বসতি শুরু করায় পার-রসড়ার নাম ছিল সানন্দবাটী ও রসড়া নাম ছিল সীমন্তবাটী। কিন্তু পরিবর্তীকালে সীমন্তবাটী এলাকায় রসেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠানের পর সীমন্তবাটীর নাম পরিবর্তন হয়ে রসড়া নাম হয় ও সানন্দবাটীর নাম পরিবর্তন হয়ে পার-রসড়া নাম হয়। জমিদার সানন্দ ঘোষ সপ্নাদেশ পেয়ে পার-রসড়া গ্রামে নিজের বাড়িতেই চর্তুভুজা দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। শুরু থেকেই ওই দেবীদুর্গার বোধনের আগে ঝড়-বৃষ্টির দেবতা জীমূতবাহনের পুজোর মধ্যে দিয়ে দেবীচণ্ডীর আরাধনা শুরু হয়। ওই নিয়মের আজও কোন পরিবর্তণ হয়নি বলেও দাবি ঘোষ পরিবারের বর্তমান সদস্যদের।
ওই পুজোর শুরু থেকেই পাঁঠা বলির রেওয়াজ থাকলেও দেবীর স্বপ্নাদেশে প্রায় ১৬০ বছর আগে ওই বলিও উঠে যায়। ঘোষ পরিবারের কর্ত্রীদের মধ্যে যোগমায়া ঘোষ ও স্নিগ্ধা ঘোষরা বলেন, “বড়দের কাছে শুনেছি সানন্দ ঘোষের এক বংশধরকে দেবী স্বপ্নাদেশ করেছিলেন, ‘কোন মায়ের পক্ষেই সন্তানের রক্তপান করা সম্ভব নয়। তাই পুজোতে কোনও পাঁঠা বলি দিস না।’ সেই থেকেই আমাদের পরিবারের পুজোর বলি বন্ধ হয়ে যায়।”
বর্তমানে দশমীর দিন পুজোর শেষে ঘট বিসর্জনের পর মন্দির চত্বরের বাইরে একটি চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রেওয়াজ আজও আছে। ওই পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা কান্দি আদালতের আইনজীবী মৃন্ময় ঘোষ বলেন, “আমাদের পরিবারের এই পুজো বহু প্রাচীন। ঠিক একই ভাবে সদস্য আছেন প্রায় হাজার জন। কিন্তু সধীকাংশ সদস্য কর্মসূত্রে ভিন দেশ ও রাজ্যে থাকেন। ফলে বর্তমানে মাত্র কয়েকজনকে দায়িত্ব নিয়ে পুজো করাতে হচ্ছে। নিয়মের কোন পরিবর্তন হয়নি। আজ জীমূতবাহনের পুজোর মধ্যে দিয়ে আমাদের পরিবারের পুজোর ঢাকে কাটি পড়ল।”