শীতঘুম ভেঙে উঠে আসছে ফুলিয়ার এক্সপোর্ট হাব

২০০৬ সালে ফুলিয়া ব্লক অফিসের কাছে তিন একর জমির উপরে ‘ফুলিয়া এক্সপোর্ট হাব’ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

সুস্মিত হালদার 

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রকল্পটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন মানুষ। আটকে থাকা ‘মৃতপ্রায়’ সেই ‘ফুলিয়া এক্সপোর্ট হাব’ প্রকল্পকে আবার বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে প্রশাসন। কর্তারা একাধিক বৈঠকও করছেন। তাঁদের দাবি, এ বার দ্রুত কাজ শেষ হবে।

Advertisement

কিন্ত প্রায় তেরো বছর আগে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত টাকার মাত্রা এখন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে উপকরণে থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতির দাম। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে জিএসটি। প্রশ্ন উঠছে, এই অতিরিক্ত বা সংশোধিত খরচ দেবে তো সংশ্লিষ্ট দফতর? কিন্তু এই প্রশ্ন সত্ত্বেও আর থেমে থাকতে রাজি নয় জেলা প্রশাসন। তারা ধাপে-ধাপে কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০০৬ সালে ফুলিয়া ব্লক অফিসের কাছে তিন একর জমির উপরে ‘ফুলিয়া এক্সপোর্ট হাব’ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। ঠিক হয়েছিল, সেখানে সুতো গোটানো, রঙ করা থেকে শুরু করে কাপড় তৈরির ইউনিট যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে বিপনন কেন্দ্র। থাকবে এটিএম সেন্টার, ক্যান্টিন, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের

Advertisement

রেস্ট হাউস।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম মারফৎ টাকা দিচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য দফতর। ২০০৫-৬ সালে প্রকল্পটির জন্য ১৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হয়। তার মধ্যে ২০০৬ সালে ১ কোটি, ২০০৭ সালে ২ কোটি, ২০০৮ সালে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনকে। কিন্তু ২০০৮ সালে সংশ্লিষ্ট দফতর ৫ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে পাঠায়। ২০১০ সালে তারা ফেরত নেয় ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। তখন জেলা প্রশাসনের হাতে থাকে মাত্র ৪৮ লক্ষ টাকা। ফলে থমকে যায় প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে অবশ্য জেলা পরিষদ থেকে জমির চার দিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়।

২০১২ সাল থেকে হঠাৎ প্রকল্পটি নিয়ে রাজ্য সরকার ফের নাড়াচাড়া করতে শুরু করে। আবার ৩ কোটি টাকা পাঠায় সংশ্লিষ্ট দফতর। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘হুগলি রিভারব্রিজ কমিশন’কে। সেই সঙ্গে ২০১৪ সালে তাদের ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন বাদে টাকার অভাবে ফের কাজ থমকে যায়।

২০১৬ সালের শেষের দিকে ফাইল জেলা পরিষদ থেকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসে প্রশাসন। ২০১৭ সালে সংশ্লিষ্ট দফতরের থেকে ৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হল ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে দুই কিস্তিতে নির্মাণকারী সংস্থাকে দেওয়া হয় ৪ কোটি। আবার কাজ শুরু করে তারা। কিন্তু জানায়, ইট-কাঠ-বালি-সিমেন্টের পাশাপাশি যন্ত্রের দামও বেড়ে গিয়েছে। ফলে নির্মাণ খরচ বাড়বে। মাস দু’য়েক আগে জেলা প্রশাসনের কাছে তারা পরিমার্জিত আনুমানিক খরচ জমা দেয়। আগে ১৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকার মধ্যে যন্ত্রের জন্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এ বার ওই সংস্থা জানিয়ে দেয় যে, তারা যন্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না।

যন্ত্র বাদ দিয়ে শুধু নির্মাণের জন্য তারা ১৫ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানায়। পাশাপাশি যন্ত্রের জন্য খরচ ধরা হয় আড়াই কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাঙ্কের সুদ-সহ জেলা প্রশাসনের কাছে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা আছে এই প্রকল্পের জন্য। বাকি টাকা কি দফতর দেবে? জেলা শাসক বিভু গোয়েল বলছেন, “আমরা ধাপে-ধাপে দ্রুত কাজটা শেষ করব। রিভিউ মিটিং করা হয়েছে।”

১১ ডিসেম্বর ফুলিয়ায় শান্তিপুর ব্লক অফিসে জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক, রানাঘাট মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে এই আলোচনা হয়েছে। কেন প্রকল্প এত দিন আটকে থাকল? কেন মাঝে টাকা ফেরত নেওয়া হল? জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের রমা বিশ্বস বলছেন, “আসলে জেলা পরিষদ আমরা দখল করলেও বেশির ভাগ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে চলে যায়। তৃণমূল কোনও কাজই করতে দিচ্ছিল না। ফলে কাজটা থমকে যায়। ” তিনি আরও বলেন, “তার উপরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘিরে একটা অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় কাজের পরিবেশ ছিল না। তাই টাকাটা তুলে নেওয়া হয়েছিল।” যা শুনে বর্তমান সভাধিপতি তৃণমূলের রিক্তা কুণ্ডুর মন্তব্য, “নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে সিপিএম এ সব বলছে। আমরা সরকারে আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে টাকা দিয়ে কাজটা শুরু করেছেন। এ বার দ্রুত তা শেষ হয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement