সেই চিপস। নিজস্ব চিত্র।
বিক্রেতার ব্যবসা-চিৎকার শুনে দোকানের সামনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালেন এক ক্রেতা। নিজের মনেই স্বগতোক্তির সুরে বলে উঠলেন, ‘আবার লকডাউন।’ পরক্ষণেই অবশ্য ভুল ভাঙল। দোকানে দোকানে রঙিন প্যাকেটে লেখা ‘লকডাউন চিপস’। দোকানির ডাক সেই চিপসের প্যাকেট নিয়েই।
করোনা আবহে কয়েক মাস লকডাউন দেখেছে গোটা দেশ। আনলকপর্বে এখনও জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। ‘লকডাউন’ শব্দবন্ধও সাধারণ মানুষের জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। এতটাই যে এবার আলুর চিপসের নামও ‘লকডাউন’। আর লকডাউন চিপস দেখে সকলেই একবার হাত বাড়াচ্ছেন প্যাকেটের দিকে। কেউ কেউ কিনে নিচ্ছেন, কেমন স্বাদের তা চেখে দেখতে। আর প্যাকেট খুললেই মিলছে আরেক চমক। কখনও কখনও চিপসের প্যাকেটের মধ্যেই মিলছে প্লাস্টিকে মোড়া সার্জিক্যাল মাস্ক। যা দেখে অনেকেই বলছেন, ‘‘একে নাম দেখেই আগ্রহ জাগছে ক্রেতার। তার ওপর আবার পাঁচ টাকার প্যাকেটে কপাল ভাল থাকলে মিলে যাচ্ছে মাস্ক। ফলে করোনাকালে এমন চিপস মন্দ নয়।’’
করোনা আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানা গিয়েছিল করোনা পকোড়ার নাম। আর এবার গ্রামেগঞ্জের দোকানে পৌঁছে গিয়েছে লকডাউন চিপস্। কেবল লকডাউন চিপস নামের জন্যই যে বিক্রি হচ্ছে তা নয়, সেই চিপসের প্যাকেটের ভিতরে ছোটদের খেলনা নয়, রাখা থাকছে মাস্ক। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘প্রথমে প্যাকেটের গায়ে লকডাউন লেখা দেখে চমকে উঠেছিলাম। তার পরেই আগ্রহ জাগল, সেটা চেখে দেখার। প্যাকেট কেটে দেখলাম মজার ব্যাপার। ভেতরে একটা সার্জিক্যাল মাস্ক রাখা।’’ ডোমকলের এক দোকানের মালিক বাপ্পা শেখ বলেন, ‘‘লকডাউন নামের এই চিপস যাঁরাই দোকানে আসছেন, একবার নিজে থেকেই নাড়াচাড়া করে কিনছেন।’’ লকডাউন ব্যবসার ক্ষতি করেছিল। সেই ‘লকডাউন’ (চিপস) এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বলে দাবি তাঁর। কেবল গ্রামেগঞ্জের ছোট ব্যবসায়ীরা নয়, পাইকারি কারবারিরাও বলছেন, এই নামের চমকের কথা। তাঁদের দাবি, কেবল নামের জোরেই ভাল বিক্রি হচ্ছে লকডাউন চিপসের। অনেকেই নাকি তাঁদের কাছে এসে ওই চিপসের প্যাকেটই কিনতে চাইছেন। ডোমকলের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বাবু মণ্ডল বলছেন, ‘‘লকডাউন শব্দটা বছরখানেক আগেও আমাদের কাছে ছিল অপরিচিত। আর এই মাসকয়েকে সবচেয়ে চর্চিত শব্দ। ফলে লকডাউনের নামে চিপস চেখে আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের।’’
ডোমকল গার্লস কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান প্রিয়ঙ্কর দাস বলছেন, ‘‘লকডাউন শব্দটা এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ। ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে এমন একটা চিপস বিক্রি করতে নেমে পড়েছেন। এতে বাড়তি প্রচারও লাগছে না।’’