চারটি স্টেশন হল্ট, ফুঁসছেন নিত্যযাত্রী

ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ  ঘটানোর সম্ভাবনার কথা সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মুখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

কাটোয়া জংশন। ফাইল চিত্র।

পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায় চারটি স্টেশনের টিকিট বিক্রির ভার ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করল রেল। যার অর্থ, ওই স্টেশনগুলি পূর্ণাঙ্গ থেকে হল্ট স্টেশনে রূপান্তরিত হতে চলেছে।

Advertisement

ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ ঘটানোর সম্ভাবনার কথা সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মুখে। নিত্যযাত্রীদের একাংশের আশঙ্কা, এই ভাবেই ধীরে-ধীরে সে দিকে পা বাড়ানো হচ্ছে। যদিও রেলের তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে। লোকসানের হাত থেকে রেলকে বাঁচাতে হলে এ ছাড়া নাকি আর কোনও পথ খোলা নেই। তাই প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন সবই ধাপে ধাপে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেই মতো বেসরকারিকরণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তারই প্রাথমিক ধাপ হিসাবে ওই বিজ্ঞপ্তি।

গত ২৩ আগস্ট এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। হাওড়া ডিভিশনের অন্তর্গত ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার চারটি স্টেশন হল বাঘনাপাড়া (অম্বিকা কালনা ও ধাত্রিগ্রাম স্টেশনের মাঝে), কালীনগর (নবদ্বীপ ধাম ও সমুদ্রগড় স্টেশনের মাঝে), ভাণ্ডারটিকুরি (বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট ও পূর্বস্থলীর মাঝে) এবং লক্ষীপুর (মেরতলা ফলেয়া ও বেলেরহাট স্টেশনের মাঝে)। একই সঙ্গে শিয়ালদহ ডিভিশনের গরিফা স্টেশনটিও হল্ট স্টেশনে রূপান্তরিত করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে হল্ট স্টেশনের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাছাই করা প্রার্থীদের প্রতিটি স্টেশনের জন্য ‘সিকিউরিটি মানি’ বাবদ দু হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। যা দেখে বিস্ময়ে হতবাক সকলে। কেননা বাঘনাপাড়া বা লক্ষীপুরের মতো স্টেশনে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এহেন স্টেশনগুলিকে কেন পূর্ণাঙ্গ স্টেশনের মর্যাদা থেকে হল্ট স্টেশনে নামিয়ে আনা হচ্ছে তা নিয়ে সরব হয়েছেন নিত্যযাত্রী থেকে সাধারন মানুষ সবাই।

Advertisement

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন হাওড়া-কাটোয়া সুবার্বন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন। দীর্ঘদিনের ওই যাত্রী সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বসু বলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারির দু’দিনের মাথায় আমরা হাওড়া ডিআরএমের কাছে আমাদের প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি ওই স্টেশনগুলিতে প্রতিবাদ সভা, পোষ্টারিং ইত্যাদি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র

বিরোধিতা করছি।”

পূর্বরেলের হাওড়া ডিভিশনের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখা হুগলী, বর্ধমান এবং নদিয়া জেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ১০৪ কিলোমিটার দূরত্বের এই রেলপথে রয়েছে উনত্রিশটা স্টেশন। নবদ্বীপ, কাটোয়া, পূর্বস্থলী, কালনা, গুপ্তিপাড়া, জিরাট, ত্রিবেণী, কুন্তীঘাট প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের ‘লাইফ লাইন’ এই রেলপথ। এহেন রুটে একসঙ্গে চারটি স্টেশনকে ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার সিধান্তে তুমুল শোরগোল পড়েছে।

হল্ট স্টেশন হলে কি কি সমস্যা মুখে পড়বেন যাত্রীরা? এই প্রশ্নের জবাবে হাওড়া-কাটোয়া সুবার্বন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণতম সদস্য তথা মুখ্য উপদেষ্টা নিশাপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “হল্ট স্টেশনে ন্যূনতম পরিষেবাটুকু পাবেন না যাত্রীরা। প্রথমত হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখা ছাড়া কোন স্টেশনের টিকিট মিলবে না। ট্রেন যাওয়া আসার ঘোষণা থাকবে না। কোন অভাব অভিযোগ জানানো যাবে না, কেননা স্টেশন তখন রেলের নয় ঠিকাদারের অধীন এবং সর্বোপরি স্টেশনে কোন উন্নয়ন নিয়ে রেল মাথা ঘামাবে না। অকুল পাথারে পড়বেন মানুষ।” তিনি আরও জানান এই মুহূর্তে বাঘনাপাড়া স্টেশনে প্রতিমাসে গড়ে সাতলক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। আড়াই শো মানুষ মান্থলি টিকিট কাটেন। এছাড়া আছে পণ্য পরিবহণের মাসুল।

অন্য দিকে হাওড়া-কাটোয়া সুবার্বন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক সৌমেন অধিকারি বলেন, “বাঘনাপাড়া স্টেশনের গড় বার্ষিক টিকিট বিক্রির পরিমাণ নব্বই লক্ষ, ভাণ্ডারটিকুরির আটচল্লিশ লক্ষ, লক্ষ্মীপুরের তেতাল্লিশ লক্ষ এবং কালীনগরের সাড়ে উনিশ লক্ষ টাকা। এরপর কেন এই স্টেশনগুলো হল্ট হবে কেনই বা একজন ঠিকাদারের হাতে ওই টাকা তুলে দিতে রেল আগ্রহী তা বুঝতে পারছি না।” এ প্রসঙ্গে নবদ্বীপ ধামের স্টেশন ম্যানেজার রমেন্দ্রলাল সরকার বলেন, “এটা রেলের কর্মাসিয়াল দফতরের ব্যাপার এনিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে ওই স্টেশনগুলিতে এখন টিকিট কেনাবেচা ছাড়া রেল চলাচল সংক্রান্ত কোনও কাজ হয় না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement