এনাইএ আধিকারিক। — ফাইল চিত্র।
নিমতিতা রেল স্টেশনের বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ-র দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটেও খুশি নন তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেন। অরঙ্গাবাদে নিজের বাড়িতে বসেই তিনি তার ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে জানিয়েছেন, “যারা ধরা পড়েছে তারা তো বারুদের কারবার করে। তারা আমাকে খুনের পরিকল্পনা করবে কেন? তাদেরকে দিয়ে কেউ এ কাজ করিয়েছে। তাই সেই মাথাকে খুঁজে বের করতে হবে এনআইএ-কে। তাদেরকে আমি সে কথা বলেছি। দুটি চার্জসিটের একটিতেও সেই চক্রান্তকারীদের হদিশ নেই। তাই এই তদন্তকে মেনে নিতে পারছি না।’’
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টা নাগাদ জাকির হোসেন তার অরঙ্গাবাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিমতিতা রেল স্টেশনে পৌঁছন কলকাতাগামী ট্রেন ধরতে। তার সঙ্গে ছিলেন জনা ৭০ কর্মী, সমর্থক। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠে ৫০ মিটার এগোতেই প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকা একটি ব্যাগে কারও পা লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। ব্যাগেই রাখা ছিল আইইডি। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে অনেকেরই হাত পা উড়ে যায়। বাঁ গোড়ালি ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় জাকিরের। সে দিন ভোরেই জাকির সহ কয়েক জনকে ভর্তি করা হয় কলকাতায় এসএসকেএমে।
তবে এত দিন পরেও জাকিরের বাঁ পায়ের ক্ষত সারেনি। একাধিক অপারেশনের পরও ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারেন না জাকির। জাকির জানান, পায়ের চিকিৎসার জন্য শনিবার তিনি ফের মুম্বই যাবেন। সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে রবিবার ভর্তি হবেন।
সেই বিস্ফোরণ কাণ্ডে এনআইএ প্রথম চার্জশিট জমা দেয় গত বছর ২৪ অগস্ট। দ্বিতীয় চার্জশিট জমা দিল ১৫ নভেম্বর। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। আবু সামাদ, শহিদুল ইসলাম ও ঈশা খান। তিন জনেরই বাড়ি সুতিতে। মূলত এলাকায় বারুদের কারবারি হিসেবেই পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তাদের। এনআইএ-র তদন্তে উঠে এসেছে, আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জাকির হোসেনকে খুন করতেই নিমতিতায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।
বিস্ফোরণের রাতেই আজিমগঞ্জ জিআরপি থানায় এফআইআর হয়। প্রথমে রাজ্য সরকার সিট গঠন করে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। দশ দিনের মাথায় সুতির রঘুনাথপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় বছর ৩৭ বয়সের আবু সামাদ নামে এক জনকে। পরদিনই ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার হয় শহিদুল ইসলাম নামে আরও একজন। দু’জনেরই বাড়ি সুতিতে। তবে বহু আগেই সুতি থেকে চলে গিয়ে ঝাড়খণ্ডে বসবাস শুরু করছিল শহিদুল। সেখান থেকে তাকে ধরে সিআইডি। পরে এনআইএ তদন্ত ভার নিয়ে ঈশা খানকে গ্রেফতার করে সুতির নতুন চাঁদরা থেকে। এনআইএ-র চার্জশিটে ধৃতদের বিরুদ্ধে ১২০বি, ২০১, ৩২৬, ৩০৭ আইপিসি, ইউএপিএ-র ১৬ ও ১৮ এবং ৩ ও ৪ বিস্ফোরক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তদন্ত জারি রেখে ফের চার্জশিট দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে এনআইএ।