নিষ্প্রভ: ঐতিহ্য হারিয়ে এখন গুদাম বড় আখড়া। নিজস্ব চিত্র
নদীর বুকে জেগে ওঠা এক খণ্ড নতুন দ্বীপ বা নবদ্বীপ শুধু এক স্থান-নাম নয়। ‘ডাউন মেমোরি লেন’ ধরে রোমাঞ্চকর এক পথচলার নাম নবদ্বীপ।
সে চলায় কখনও সঙ্গী বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর। কখনও তুর্কি হানাদার বখতিয়ার খিলজি কিংবা বৃদ্ধ রাজা লক্ষন সেন। এ পথেই দেখা হয়ে যাবে বাসুদেব সার্বভৌম বা চৈতন্যদেবের। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, রঘুনাথ শিরোমণি হয়ে এই পথ এসে মিশেছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পথে। সেই নতুন দ্বীপ ক্রমে পুরনো হয়। কিন্তু হাজার বছর ধরে এ শহর জীবন্ত থেকে যায়। আজ ফোর-জি গতিতে দৌড়চ্ছে শহর। ইতিহাস ঘাড়ে নিয়ে পথ চলা শহরটার ঐতিহ্যে পলি জমছে। মঙ্গলবার ছিল ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডে’। ফি বছর এই দিনটি আসা আবার নিঃশব্দে পারও হয়ে যায়। সময় শুধু ছোবল বসায় ঐতিহ্যে।
এখনও শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন মূর্তি, বিগ্রহ, মন্দির, দুষ্পাপ্য পুঁথি এবং নানা ধরনের স্মারক। সংরক্ষণের অভাবে তারাও আজ ধ্বংসের প্রহর গুণছে। সপ্তদশ শতকে গড়ে ওঠা নবদ্বীপের প্রথম বৈষ্ণব আখড়ার নাট মন্দির এখন মালগুদামে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাঙা পড়েছে ঐতিহ্যবাহী তোরণ। শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে রয়েছে আরও নিদর্শন। কিন্তু সবই ভগ্নদশায়।
প্রাচীন নির্মাণ গুলির মধ্যে অন্যতম ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত বড় আখড়া। এটি চৈতন্য পরবর্তী নবদ্বীপের প্রথম বৈষ্ণব আখড়া। নবদ্বীপে ন্যায়ের পাঠ নিতে আসা দ্রাবিড় ব্রাহ্মণ তোতারাম দাস প্রবল বৈষ্ণব অনুরাগী হয়ে ওঠেন। গঙ্গার ভাঙনে চৈতন্যদেবের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেলেও তোতারামের চেষ্টায় ১৭৮৮ সালে তৈরি হয় মহাপ্রভু মন্দির। “পীঢ়ারীতি শৈলীতে” গড়া একচূড়া এই মন্দির বর্তমানে নবদ্বীপের সবচেয়ে প্রাচীন চৈতন্যমন্দির।
১৮২৩ সালে মহারাজ গিরিশচন্দ্র নবদ্বীপে নির্মাণ করান বাংলার বিরল অষ্টকোণাকৃতি শিবমন্দির। ১৮৬৯ ব্রজনাথ বিদ্যারত্ন হরিসভা মন্দির স্থাপন করেন। ঐতিহ্যবাহী এই সৌধগুলিও আজ নিরাপদ নয়। পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেনন, “নবদ্বীপের বিভিন্ন মন্দিরের তালিকা হেরিটেজ কমিশনকে দিয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম, যাতে সেগুলির সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি।”