প্রতীকী ছবি।
প্রাণ যায় যাবে। কিন্তু ফুটবলকে মুছে ফেলা যাবে না জীবন থেকে। ফলে করোনা পরিস্থিতিতেও গ্রাম বাংলার মাঠ জুড়ে চলছে ফুটবল খেলা। রীতিমতো করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ফুটবলে মেতে উঠছেন গ্রামের মানুষ, নাচতে নাচতে মাঠে নামছে খেলোয়াড়রা। কোথাও কোথাও আবার আয়োজক সংস্থা মাঠে করোনা নিয়ে সচেতন করছেন সাধারণ মানুষকে। পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে করোনা জয়ী প্রাক্তন খেলোয়াড়দের নামে। এখানেই শেষ নয়, ফুটবল দলগুলোর নামকরণ হয়েছে করোনাকে কেন্দ্র করে।
কেমন সেই নাম?
রবিবার ডোমকলের পঞ্চাননপুর এলাকায় আয়োজন করা হয়েছিল একটি ফুটবল খেলার। সেখানে এলাকার চারটে দল নিয়ে খেলা হয়েছে, আর এই চারটি দলের কোনওটার নাম দেয়া হয়েছে করোনাকে করব জয়, কোনটা আবার করোনামুক্ত বাংলা বা করোনাকে ভয় নয়। এখানেই থেমে থাকেননি পঞ্চাননপুর আয়োজক সংস্থার কর্তারা। রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন ট্রফির নাম দেওয়া হয়েছিল করোনা জয়ী এলাকার প্রাক্তন ফুটবলার ধীমান দাসের নামে। কর্তাদের দাবি, ‘‘আমরা কিছুটা হলেও বিধি লঙ্ঘন করছি। সেটা যেমন একদিকে ঠিক, অন্যদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছি সেটাও ঠিক। ফুটবলের মতো খেলা খেলতে না পারলে শরীর ও মন কোনটাই ঠিক থাকবে না। তা ছাড়া, আমাদের এলাকায় যে ভাবে অন্য সমগ্র কাজ খোলামেলা ভাবে চলছে তাতে ফুটবলার আর বাকি
থাকে কেন।’’
আয়োজক সংস্থার এক কর্মকর্তা সানিউত ইসলাম বলছেন, "আমাদের এলাকায় হাটবাজার থেকে অন্য সব কিছুই চলছে খোলামেলা। সেখানে মাস্ক থেকে কোনও রকমের কিছুই ব্যবহার করা হচ্ছে না, ফলে ফুটবল খেলা নিয়ে আর তেমন কোনও রাখঢাক করিনি আমরা।’’
অন্য দিকে এই করোনা আবহের মধ্যেই কর্ণসুবর্ণ ফুটবল মাঠে স্থানীয় সবুজ সঙ্ঘের পরিচালনায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হয়েছে একটি ফুটবল খেলার। সেখানে পুরস্কার হিসেবে রাখা হয়েছে মুরগির মাংস, হলুদ লঙ্কা জিরের প্যাকেট। তাছাড়াও ফাইনালে সমস্ত খেলোয়াড়দের দেওয়া হবে আলু। আয়োজকদের দাবি, আনাজের দাম চড়চড় করে বাড়ছে, ফলে খেলার মাধ্যমে আনাজ জিতলে মনের আনন্দের পাশাপাশি গৃহিণীরাও খুশি হবে। সব মিলিয়ে তাঁদের এমন পুরস্কারের ভাবনা চিন্তা।
যদিও এই খেলা নিয়ে একটা আশঙ্কার মেঘ তৈরি হচ্ছে গ্রামেগঞ্জে। কারণ ফুটবল খেলায় কোনও রকম বিধি মেনে যেমন খেলা সম্ভব নয়, তেমনি ভাবে মাঠের পাশে দাঁড়ানো দর্শকও সেই বিধি মানতে পারবে না। তা হলে সব কিছু জেনে বুঝেই এত ঝুঁকি নিয়ে ফুটবল খেলা করছেন কেন?
জেলার এক ক্লাবের কর্মকর্তা বলছেন, অন্য সব কাজ যখন খোলা মেলা হচ্ছে তখন ফুটবল হলে আর ক্ষতি কি! বরং ফুটবল খেললে শরীর সুস্থ থাকবে, দর্শকদের মন চাঙ্গা হবে। শুধু ভয় নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে একটু আনন্দ উপভোগ করে বাঁচার চেষ্টা করছি আমরা। যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থা গুলি এই খেলার অনুমোদন দিচ্ছে না। বরং তারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের বার্তা ছড়িয়ে এ ধরনের খেলা না করার জন্য অনুরোধ
করেছে ক্লাবগুলিকে।
তবে মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সম্পাদক জগন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে, সরাসরি শরীরের সংস্পর্শ হতে পারে এমন খেলা বন্ধ থাকবে। তাই ফুটবলের কোনও অনুমতি নেই। আমাদের কাছ থেকে এমন ধরনের খেলায় কেউ অনুমতি নেয়নি। মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’