জন্মদিনে বিধায়ককে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন অনুগামীরা। — নিজস্ব চিত্র।
অনুগামীদের আনা পেল্লায় কেক কাটলেন, আকাশে চোখ তুলে দেখলেন তাঁকে ভালবেসে জ্বালানো আতশবাজির রোশনাই, গলা মেলালেন যৌথ সঙ্গীতে, হাসিমুখে অংশ নিলেন ঢালাও খাওয়াদাওয়ার আসরে। জন্মদিনে ফুরফুরে মেজাজে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম। ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, বাড়ি এবং কলেজে সিবিআই তল্লাশির পর এই প্রথম এতটা ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল ‘দাদা’কে। যদিও এই আড়ম্বরের ঘটা দেখে খানিকটা হলেও বিড়ম্বনায় জাফিকুল নিজেও। প্রত্যাশিত ভাবেই বিধায়ককে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েননি বিরোধীরা।
বুধবার ছিল ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুলের ৪৬তম জন্মদিন। ওই দিন সন্ধ্যায় ডোমকল পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে, তাঁর নিজের বাড়িতে জন্মদিনের একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন বিধায়ক নিজে। তাতে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্য-সহ ব্যবসায়িক বন্ধুবান্ধবরা। মেনুতে ছিল পোলাও, মাংস। সেখান থেকে বিধায়ক চলে যান বিডিও অফিসের মোড়ে তৃণমূল কাউন্সিলরদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে। সেখানে শ’তিনেক নেতা, কর্মী, সমর্থক-সহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিল ঢালাও খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত। জন্মদিন উপলক্ষে আনা হয়েছিল পেল্লায় কেকও। সেই কেক কাটেন বিধায়ক। নিজে খান, অন্যদেরও খাইয়ে দেন। পার্টি অফিস সাজানো হয়েছিল ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ লেখা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে। লাগানো হয়েছিল ফুল। জ্বলেছিল বাড়তি আলো। সেই সঙ্গে আতশবাজির চোখধাঁধানো প্রদর্শনীও ছিল নজরকাড়া। তার পর পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া শুরু হয়। বহু মানুষ বিধায়কের জন্মদিনের ভোজ খান কব্জি ডুবিয়ে। সিবিআইয়ের র্যাডারে থাকা বিধায়কের জমকালো জন্মদিন অনুষ্ঠান নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “যে ভাবে আতশবাজি পুড়িয়ে ডোমকলের জনকল্যাণ মাঠে নিজের জন্মদিন পালন করলেন ডোমকলের বিধায়ক, তাতে মনে হচ্ছে তিনি কোনও যুদ্ধ জয় করে ফিরেছেন! দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তকে এ ভাবে সদর্পে অনুষ্ঠান করতে এই প্রথম দেখলাম।’’ বিজেপির দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, “বিধায়ক তাঁর অনুগামীদের পরোক্ষে ঘুষ দিয়েছেন জন্মদিনে! যাতে সিবিআই ধরলে তাঁরা আন্দোলন করতে পারেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানও কটাক্ষ করেছেন।
গোটা অনুষ্ঠান যে ভাবে আড়ম্বরের প্রদর্শনীতে পরিণত হল তা নিয়ে বিড়ম্বনার কথা নিজমুখে স্বীকার করে নিয়েছেন ডোমকলের তৃণমূল বিধায়কও। তিনি বলেন, ‘‘এই আড়ম্বর তো আমি চাইনি। চেয়েছিলাম, জন্মদিনেও সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে। দলীয় কর্মী ও অনুগামীরা আমাকে না জানিয়েই এই আয়োজন করে ফেলেছেন। আমি তাঁদের কড়া নির্দেশ দিয়েছি যে, পরবর্তীতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে হলে যেন তাতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা থাকে। দেখে যেন মনে না হয়, আড়ম্বর দেখানোই উদ্দেশ্য।’’
প্রসঙ্গত, ক’দিন আগেই সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছিলেন ডোমকলের বিধায়কের বাড়ি এবং কলেজে। সিবিআই জাফিকুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছিল নগদ ২৮ লক্ষ টাকা-সহ কয়েক কেজি সোনার গয়না। উদ্ধার হয়েছিল সম্পত্তির নথিও। সিবিআই সূত্রে খবর, নথি পরীক্ষার কাজ এখনও শেষ হয়নি। সম্পত্তির খতিয়ান দেখে বিধায়ককে ডেকে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছিল। এই আবহেই নিজের জন্মদিন পালন করলেন জাফিকুল।