সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেও অবরুদ্ধ চূর্ণী। রানাঘাটে। —নিজস্ব চিত্র।
নদীর উপর নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শেষ। শুরু হয়েছে যান চলাচল। কিন্তু সেতু নির্মাণের সময় বুঝিয়ে ফেলা হয়েছিল নদীর একাংশ। তাতেই রুদ্ধ হয়েছে চূর্ণীর প্রবাহপথ। নদীবক্ষে সেতুর স্তম্ভ তৈরির কাজ শেষ হলেও কেন নদীর গতিপথ আটকে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মী ও সাধারণ মানুষজন।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রানাঘাটে নদীর উপরে থাকা জাতীয় সড়কের পুরনো একটি সেতুর সমান্তরালে তৈরি হয়েছে অপর একটি নতুন সেতু। অভিযোগ, সেই সেতু তৈরি করতে গিয়ে নদীর দু'দিকে পার কার্যত বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। কথা ছিল, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেই নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। অথচ নতুন সেতুতে স্তম্ভের পাশের অংশে মাটি ফেলার কারণে নদী সেখানে প্রায় নালায় পরিণত হয়েছে।
এর জন্য ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। চূর্ণী-মাথাভাঙা নদী কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক সুদীপ মান্নার দাবিু, "কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক মহল জেনে-বুঝেই মিথ্যাচার করছে। দূষিত নদীর তালিকায় শীর্ষ স্তরে থাকা চূর্ণীকে এখন হয়তো সরকারি উদ্যোগেই মেরে ফেলা হবে। বার বার আমরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছি। সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়ে গিয়েে, অথচ নদীর আগের অবস্থায় ফিরল না!"
রানাঘাট মহকুমার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাজদিয়া পাবাখালি থেকে মাথাভাঙা নদী দু'ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি চূর্ণী, অপরটি ইছামতী নামে বয়ে গিয়েছে। মাজদিয়া থেকে বেরিয়ে চূর্ণী রানাঘাটের পায়রাডাঙার কাছে ভাগীরথী নদীতে মিশেছে। নদীর প্রবাহ পথ প্রায় ৫৩ কিলোমিটার। জনশ্রুতি আছে, নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বর্গি আক্রমণের সময় একটি খাল খনন করেছিলেন। পরে সেই খাল নদীর রূপ নেয়।
পরিবেশ কর্মীদের দাবি, সেতু নির্মাণের নামে চূর্ণীর বিভিন্ন অংশ বুজিয়ে ফেলার উদাহরণ এই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে কালীনারায়ণপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সেতু, রানাঘাট ১ ব্লকের আনুলিয়া-মাজদিয়া সংযোগকারী সেতু তৈরির সময়েও নদীর পথ অবরুদ্ধ হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি থাকলেও সংশ্লিষ্ট সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ পরে নদীর ‘ড্রেজ়িং’ না করেই চলে গিয়েছে।
জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষের নদিয়া জেলা প্রকল্প আধিকারিক দীনেশকুমার সিংহের আশ্বাস, " অবশ্যই নদীতে ড্রেজ়িংয়ের কাজ করা হবে।" কিন্তু সেই কাজ কবে হবে, তার কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।