রাতভর বৃষ্টিতে বাড়ি ভাঙল কান্দিতে, জলমগ্ন নবদ্বীপ

টানা বৃষ্টিতে নাস্তানাবুদ দুই জেলা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কান্দি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। জলে জমে গিয়েছে নবদ্বীপের বেশ কিছু এলাকাতেও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কান্দির চারটি ব্লকে বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৫
Share:

জল উঠে এসেছে কান্দি-সালার রাজ্য সড়কেও। শনিবার দুপুরে কান্দির রসোড়ায় গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

টানা বৃষ্টিতে নাস্তানাবুদ দুই জেলা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কান্দি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। জলে জমে গিয়েছে নবদ্বীপের বেশ কিছু এলাকাতেও।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কান্দির চারটি ব্লকে বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। রাস্তাতেও জল জমে গিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বড়ঞার চাষিরা।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে কান্দি, বড়ঞা, ভরতপুর ও খড়গ্রাম এলাকায় পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়েছে। ওই এলাকার নদী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়গ্রাম ব্লকের ব্রাহ্মণী নদীর ঘুষকুল থেকে যাদবপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বারোটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিডিও রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে সেচ দফতর ও স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বাঁধ মেরামতির নির্দেশ দেন। যাদবপুর, ঘুষকুল বাঁশলায়, টিটিডাঙা গ্রামগুলিতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। হিজল অঞ্চলের বাবলা ও দ্বারকা নদীর জলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

কান্দি পুরসভারও কয়েকটি ওয়ার্ডে জল ঢুকেছে। পুরসভার ৬, ৭, ৮, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে প়ডেছেন। স্থানীয় উপ-পুরপ্রধান গৌতম রায় বলেন, “পুরসভার নিচু এলাকাগুলিতে জল জমেছে। পাম্পের মাধ্যমে জল নিকাশির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’


বড়ঞায় কুঁয়ে নদীর জলে ভরেছে খেত। ছবি: কৌশিক সাহা।

জাওহাড়ি ও বড়ঞা গ্রামের প্রায় চার হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। কারণ, ওই গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র মোরামের রাস্তাটি নিচু হওয়ায় সেখানে জল জমেছে। এলাকার লোকজন বাইরে বেরোতে পারছেন না। ওই দুই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুঁয়ে ও ময়ূরাক্ষী নদী। সামান্য দূরে লাঙলহাটা বিল। ময়ূরাক্ষী নদীর জল ছাড়া হয়েছে। ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গ্রামের রাস্তা। গ্রামের প্রায় ৩০টি মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এলাকার স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। জাওহাড়ি পঞ্চায়েতের সদস্য কংগ্রেসের কার্তিক দাস বলেন, “এই অবস্থায় বহু বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা অমৃত্য বাগদি, সঞ্জয় ঘোষেরা বলছেন, “ধান সব রোয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জমিতে জল জমায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

কান্দির মহকুমা সেচ আধিকারিক দীপক রক্ষিত জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বীরভূম ও ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। ঝাড়খণ্ডের মশানজোড় জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে তিলিপাড়া জলাধার থেকেও জল ছা়ড়া হয়েছে। আর তাতেই বিপত্তি ঘটছে। তবে নদী বাঁধগুলির উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কান্দির মহকুমাশাসক বিজিনকৃষ্ণ বলেন, “মহকুমার আমন চাষিদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় ভরতপুর ব্লকের পাঁচ জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তাছাড়াও বড়ঞা, কান্দির হিজল ও খড়গ্রাম ব্লকেও ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

অন্যদিকে, বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে নবদ্বীপ পুর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড। বৃষ্টির জমা জলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ। মাত্রাছাড়া বৃষ্টিতে ভরে গিয়েছে নদী-নালা। শহরের চারদিকে ঘিরে থাকা গঙ্গা, ছাড়িগঙ্গার মতো অনান্য নদীখাত গুলির জলস্তর অনেকটা উঁচুতে উঠে এসেছে। ফলে শহরের জমা জল বের হওয়ার রাস্তা পাচ্ছে না। এর সঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার বৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ২৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, টানা বৃষ্টিতে ১৬টি ওয়ার্ড কমবেশি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পুরপ্রধান তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “বৃষ্টির জলে হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। কিছু পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি জল জমেছে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুকুমার রাজবংশী বলেন, “প্রায় ৯০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ পরিবার জলের কারণে বাড়ি ছেড়েছে।’’ নবদ্বীপের উত্তর প্রান্তে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপনগর, বড় প্লট দেবরাজপুর, বরিশাল পাড়া, শিমুলতলা প্রভৃতি এলাকায় যাতায়াতের জন্য নৌকা চলাচল করছে। জল বের করার জন্য কোথাও কোথাও পাম্প বসানো হয়েছে।

জলমগ্ন এলাকার অনেক বাড়িই টালির ছাউনির। বৃষ্টির জল টালি বেয়ে ঘরে যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে তার জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করা জরুরি। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ত্রিপলের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন দ্রুত ত্রিপল ও অনান্য ত্রান সামগ্রী পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement