Krishnanagar

রাস্তা সরু, নাজেহাল দমকল কৃষ্ণনগর: অগ্নি নির্বাপণ

মাথার উপরে জালের মতো বিছিয়ে থাকা তার, আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত উপকরণের অভাব, সরু রাস্তা— সব মিলিয়ে কৃষ্ণনগরের বাজারগুলি যেন এক একটি জতুগৃহ।     

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪৬
Share:

ঝুলছে বিদ্যুতের তার। নিজস্ব চিত্র

এলোমেলো করে টাঙানো ত্রিপল। তাতে আকাশ ঠিক মতো চোখে পড়ে না। মাথার উপর জালের মতো ছেয়ে আছে বিদ্যুতের তার। এক দোকান থেকে আর এক দোকানে টেনে আনা হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, যদি কোনও দিন বাজারে আগুন লাগে তা হলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকবে না। মাথার উপরে জালের মতো বিছিয়ে থাকা তার, আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত উপকরণের অভাব, সরু রাস্তা— সব মিলিয়ে কৃষ্ণনগরের বাজারগুলি যেন এক একটি জতুগৃহ।

Advertisement

২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাত্রবাজারের কথাই ধরা যাক। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। নেই বালির বস্তা। নেই পর্যাপ্ত জলের উৎস। জরুরি হলে যার থেকে জল পেতে পারে দমকল বাহিনী। বাজারের ভিতরে দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার মতো প্রশস্ত রাস্তাও নেই। তার উপরে দোকানগুলি ক্রমশ রাস্তার উপরে এগিয়ে আসায় আরও সরু হয়েছে রাস্তা। ফলে দমকলের ইঞ্জিন তো দূরের কথা দু’টো মোটরবাইক পাশাপাশি যাওয়ার উপায় নেই।

জেলা সদর কৃষ্ণনগরে বিভিন্ন প্রান্তে ছোটবড় একাধিক বাজার আছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, কোনও কোনও বাজারের রাস্তা এত সঙ্কীর্ণ না হলেও আগুন লাগলে নেভানোর মতো ব্যবস্থা নেই। নেই আশপাশে বড় জলের উৎস। শহরের প্রাচীন ও বড় বাজারগুলির একটি হল ২২ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ারিবাজার। সেই বাজারে বেআইনি দখলের ফলে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। মাথার উপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে বিদ্যুতের তার। তা এমনই জট পাকিয়েছে যে, ব্যবসায়ীদের একাংশের ধারণা, কোনও কারণে বাজারে আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন কোনও ভাবেই ভিতরে ঢুকতে পারবে না। প্রায় একই অবস্থা ১২ নম্বর বেলেডাঙা বাজার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তিনগর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনবাজারের।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকল সূত্রে খবর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘূর্ণী বাজার প্রশস্ত রাস্তার পাশে হলেও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। শুধু বাজার এলাকাতেই নয়, অন্য ব্যবসা-কেন্দ্র যেমন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের চ্যালেঞ্জ মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, ১৮, ১৯ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রস্থলে সদর মোড়, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বেলেডাঙা মোড়ে জলের বন্দোবস্ত নেই। বাজারগুলির পাশেই রয়েছে ঘন জনবসতি। বাজারে আগুন লাগলে তা জনবসতিতে ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। দমকল বাহিনীর এক পদস্থ কর্তা জানান, কোথাও আগুন লাগলে ট্যাঙ্কার নিয়ে আসা হয়। সেই সঙ্গে পাম্প। যাতে সেই পাম্প চালিয়ে আশেপাশের কোনও জলাশয় থেকে বা অন্য কোনও উৎস থেকে জল সংগ্রহ করতে পারে। কৃষ্ণনগরের বাজারগুলির ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই।

কৃষ্ণনগর দমকল বাহিনীর ওসি শক্তিরঞ্জন দে বলছেন, “শহরের কোনও বাজারে আগুন লাগলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। কারণ কোনও বাজারেই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। আবার প্রধান বাজারগুলোর এমন অবস্থা যে ইঞ্জিন ঢুকতেই পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “একাধিক বৈঠকে আমরা আগুন নেভানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেছি। সবাইকে সতর্ক করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।”

যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, পুরনো এই শহরের বাজার গড়ে উঠেছিল অপরিকল্পিত ভাবে। তাই নতুন করে কিছু করা কঠিন। তা মাথায় রেখে পুরসভা শহরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটার রিজারভার’ বানিয়েছে। প্রতিটিতে ২০ হাজার লিটার জল ধরে। পোস্টঅফিস মোড়, চ্যালেঞ্জ মোড়, পাত্রবাজারের সামনে, বড়বাজার পেট্রোল পাম্পের কাছে, শক্তিনগর পাঁচমাথার মোড়, পুরসভার সামনে ও ঘূর্ণী এলাকায় বেশ কয়েক বছর আগে রিজারভারগুলি তৈরি হয়েছে। বছরে দু’বার রিজারভারের জল বদল হয়।

তবে দমকল বাহিনীর দাবি, শহরে এমন কোনও রিজারভারের কথা তারা জানে না। কৃষ্ণনগর দমকল বাহিনীর ওসি শক্তিরঞ্জন দে বলেন, “এমন কোনও রিজারভারের কথা আমাদের জানা নেই।” যা শুনে প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলছেন, “ওয়াটার রিজারভার যে আছে সেটা তো জেনা নেওয়ার কথা দমকল বাহিনীর। তারা চাইলে আমরা দেখিয়ে দেব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement