মৃত ছাত্রের বাৎসরিক কাজে তাঁর বাবা। সোমবার মায়াপুরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য
তাঁর ফোনের কলার টিউনে গীতার শ্লোক। সেই শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সঙ্গে নিয়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিল তাঁর ছেলে।
কিন্তু দু’দিনের মধ্যে, ১০ অগস্ট ২০২৩ রাতে যাদবপুর মেন হস্টেলে র্যাগিংয়ের শিকার হন বগুলার সেই ছাত্র। হস্টেলের নীচে তাঁর মৃতদেহ মেলে। রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়।
এর পর কেটে গিয়েছে প্রায় একটি বছর। মায়াপুরের শ্রীচৈতন্য মঠে সোমবার সেই ছাত্রের বাৎসরিক কাজে করলেন তাঁর মা-বাবা, ভাই ও পরিজনেরা। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে হওয়া শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গীতাই ছিল পুত্রহারা পিতার সম্বল। খানিক দূরে নাটমন্দিরে ছেলের কথায় বার বার কান্নায় ভাঙছিলেন মা। তবে সন্তান হারানোর শোকের সঙ্গে এখন মিশেছে তীব্র ক্ষোভ এবং আক্ষেপ।
মায়ের কথায়, “এখন একটু একটু করে সব শুনতে পাচ্ছি। একটা ছেলেকে এত জন মিলে কী অকথ্য অত্যাচার করেছে। যত শুনছি, ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আর নিতে পারছি না। ছেলেকে যাদবপুরে পড়াতে চেয়ে আমাদের কি এটাই পাওয়ার কথা ছিল?” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “আমার ছেলে যখন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে, তখন খবর পেয়েও তাঁরা ডিনারে ব্যস্ত ছিলেন! অভিযুক্ত ছাত্রদের সঙ্গে সেই কর্তৃপক্ষেরও কঠোর শাস্তি চাই।”
কয়েক ঘণ্টা ধরে সন্তানের পারলৌকিক কাজ সেরে শ্রান্ত বাবার আক্ষেপ, “দীর্ঘসময় অন্তর মামলা উঠছে আদালতে। অভিযুক্তদের হয়ে নামী-দামি আইনজীবীরা দাঁড়িয়েছেন। এক একদিন তিরিশ জন আইনজীবী বিপক্ষে সওয়াল করেছেন। আমি হতবাক। বহু ক্ষেত্রে আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও হয়েছে।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “আমি ভেঙে পড়িনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিষয়টিতে নজর রাখছেন। তাঁর প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা। দেশের আইনের প্রতিও আমাদের ভরসা রয়েছে।”
আতঙ্কে এখন আর ছোট ছেলেকে কাছছাড়া করতে চান না তাঁরা। মায়ের কথায়, “বড় ছেলেকে কোনও দিন পূর্বপাড়ার স্কুলে ভর্তি করাইনি শুধু রেললাইন পেরিয়ে যেতে হবে বলে। বাড়ির কাছে হাইস্কুলে পড়িয়েছি। তারই এমন বীভৎস মৃত্যু!”
তবে চোখের জল শুকিয়ে বাবার চোয়াল এখন শক্ত। সম্প্রতি এই মামলায় নতুন সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যাদবপুর কর্তৃপক্ষ-সহ যাঁরা দুর্যোধন-দুঃশাসনদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, আমার লড়াই তাঁদের বিরুদ্ধেও। আমি শেষ দেখে ছাড়ব।”